Description
কে আমাকে সৃষ্টি করেছেন? এবং কেন করেছেন ?প্রতিটি বস্তুই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ওপর প্রমাণ বহন করে।
অন্যান্য অনুবাদ 37
আসমানসমূহ, যমীন এবং তার মধ্যবর্তী মহান সৃষ্টিসমূহ যা আয়ত্তে আনা সম্ভব নয় তা কে সৃষ্টি করেছেন?
আসমান ও যমীনে এ সূক্ষ্ম-সুদৃঢ় ব্যবস্থা কে তৈরী করেছেন?
কে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও বিবেক প্রদান করেছেন এবং তাকে জ্ঞান অর্জন ও সত্য চিনতে সক্ষম করেছেন?
আপনার শরীরের অঙ্গে এবং অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীর দেহে এই সূক্ষ্ম ব্যবস্থাটিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? এবং কে তাদের সৃষ্টি করেছেন?
কিভাবে এই সুবিশাল মহাবিশ্ব তাকে নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণকারী নিয়মসহ স্থির রয়েছে ও পরিচালিত হচ্ছে।
কে সেই সত্তা, যিনি এই পৃথিবী (জীবন-মৃত্যু, জীবিতদের বংশ পরম্পরা, দিন-রাত্রি এবং ঋতুসমূহের পরবর্তন ইত্যাদি) নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন?
এই বিশ্ব কি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে? নাকি এটি কোন অস্তিত্বহীন বস্তু থেকে এসেছে? নাকি এটি কাকতালীয়ভাবে পাওয়া গেছে?
কেন একজন মানুষ এমন জিনিসের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে যা সে দেখে না? যেমন উপলব্ধি, বিবেক, আত্মা, আবেগ এবং ভালোবাসা? কারণ তিনি এর প্রভাব দেখতে পান তাই না? তাহলে কীভাবে একজন মানুষ এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করবে, অথচ সে তাঁর সৃষ্টির নির্দশন, তাঁর কর্মের প্রভাব এবং তাঁর রহমত প্রত্যক্ষ করে?!
কেউ বিশ্বাস করবে না যদি বলা হয় এই বাড়ীটি কারো বানানো ছাড়াই এমনিতেই অস্তিত্বে এসেছে অথবা যদি তাকে বলা হয় এই বাড়িটিকে অনিস্তত্বই অস্তিত্ব দান করেছে! তাহলে কিছু মানুষ কিভাবে তাকে বিশ্বাস করতে পারে, যে বলে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টিকর্তা ব্যতীতই অস্তিত্বে এসেছে? একজন বিবেকবান মানুষ কিভাবে এ কথা গ্রহণ করতে পারে যে, মহাবিশ্বের এই সূক্ষ্ম গাঁথুনি হটাৎ অস্তিত্ব লাভ করেছে?
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:(أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ، أَمۡ خَلَقُواْ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۚ بَل لَّا يُوقِنُونَ). أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ، أَمۡ خَلَقُواْ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۚ بَل لَّا يُوقِنُونَ : "তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? নাকি তারা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে না।"[৫২: ৩৫-৩৬]।
এখানে অবশ্যই একজন প্রভু (রব) এবং সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন, যার অনেক নাম এবং মহান গুণাবলী রয়েছে যা তাঁর পরিপূর্ণতাকে নির্দেশ করে। যেমন তাঁর কতক নাম: আল-খালিক (সৃষ্টিকর্তা), আর-রহীম (দয়াময়), আর-রযযাক (রিযিকদাতা), আল-কারীম (সম্মানিত)। রব সুবহানাহু ওয়াতালার নামসমূহের ভেতর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ নাম হলো "আল্লাহ" নামটি। আর তার অর্থ হলো: তিনি একাই ইবাদতের উপযুক্ত তার কোনো শরীক নেই।
আল-কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন ([১]):﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ : "বলুন, 'তিনি আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়,"* ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ : * 'আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।*لَمۡ یَلِدۡ وَلَمۡ یُولَدۡ لَمۡ یَلِدۡ وَلَمۡ یُولَدۡ : * তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।*وَلَمۡ یَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ﴾ وَلَمۡ یَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ : * আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই।"[১১২: ১-৪]।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿اللَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَلا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ﴾ اللَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَلا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ "আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) মাবূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। তাঁর জন্যই আসমানসমূহে যা রয়েছে তা এবং যমীনে যা আছে তা। কে সে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে এবং যা আছে তাদের পেছনে। আর তারা তাঁর জ্ঞানের সামান্য পরিমাণও আয়ত্ব করতে পারে না, তবে তিনি যা চান তা ছাড়া। তাঁর কুরসী আসমানসমূহ ও জমিন পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং এ দু'টোর সংরক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ, মহান।"[২ : ২৫৫]।
আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে বশীভূত করেছেন আর তাকে তাঁর সৃষ্টির জন্য উপযোগী করেছেন। তিনিই আকাশমন্ডলী এবং তার মধ্যকার বৃহদাকার মাখলূকসমূহ সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি সূর্য, চন্দ্র এবং রাতের জন্য এই সুনিপুণ ব্যবস্থা তৈরী করেছেন যা তাঁর মহিমা ও শক্তিকে নির্দেশ করে।
তিনিই হচ্ছেন সেই সত্তা, যিনি বাতাসকে আমাদের বশীভূত করেছেন যা ছাড়া আমাদের জীবন অসম্ভব। তিনিই আমাদের উপরে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং আমাদের জন্য সাগর ও নদীকে বশীভূত করেছেন। তিনিই আমাদের কোনো শক্তি ছাড়াই আমাদের খাদ্যদান করেছেন যখন আমরা আমাদের মায়ের পেটে ভ্রুণ হিসাবে ছিলাম। তিনিই আমাদের শিরায় রক্ত সঞ্চালন করেন এবং তিনিই আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হৃদয়কে বিরামহীনভাবে স্পন্দিত করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿وَاللَّهُ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾ وَاللَّهُ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ : "আর আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্গত করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না এবং তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।"(১৬: ৭৮)।
আমাদের রব (আল্লাহ) আমাদেরকে বিবেক দিয়েছেন যা তাঁর মহত্তকে অনুধাবন করে এবং আমাদের মধ্যে এমন স্বভাব (ফিতরাত) গেঁথে দিয়েছেন, যা তাঁর পূর্ণতা এবং কোনো ত্রুটি দ্বারা বিশেষিত হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় প্রমাণ করে।
ইবাদাত একমাত্র আল্লাহ তা'আলার জন্যই হতে হবে; কারণ তিনিই পরিপূর্ণ এবং ইবাদাতের একমাত্র যোগ্য এবং তাঁকে ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা করা হয় তা বাতিল, অসম্পূর্ণ এবং মৃত্যু ও ধ্বংসের মুখোমুখী।
মা'বূদ কোন মানুষ, মূর্তি, গাছ অথবা প্রাণী হতে পারে না!
একজন পরিপূর্ণ সত্তা ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত (উপাসনা) করা কোনো বিবেকবান ব্যক্তির জন্য শোভনীয় নয়, তাহলে তার চেয়েও নিকৃষ্ট সৃষ্টির ইবাদাত (উপাসনা) কীভাবে করা যায়?
রবের জন্য সম্ভব নয় যে, তিনি কোন নারীর গর্ভে ভ্রূণ হিসেবে থাকবেন এবং বাচ্চারা যেভাবে জন্মগ্রহণ করে, সেভাবে তিনি জন্ম গ্রহণ করবেন!
রব হচ্ছেন তিনি, যিনি সৃষ্টিজগত সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিজগত তাঁর কবজায় এবং তাঁর কর্তৃত্বাধীন। কোনো মানুষের পক্ষে তাঁর ক্ষতি করা সম্ভব হবে না এবং কারো পক্ষে তাঁকে শূলে চড়ানো, যন্ত্রনা দেওয়া ও তাঁকে অপমান করা সম্ভব হবে না!
রব মৃত্যুবরণ করবেন এটা সম্ভব নয়!
রব যিনি ভুলে যান না, ঘুমান না এবং খাবারও খান না। তিনি মহান তাঁর স্ত্রী বা সন্তান থাকতে পারে না। সুতরাং সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্বের অসংখ্য গুণাবলী রয়েছে এবং যাকে কখনই মুখাপেক্ষী বা ত্রুটি দ্বারা গুণান্বিত করা যায় না। এবং নবীদের সাথে সম্পৃক্ত সমস্ত নস যেখানে সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্বের বিরোধিতা রয়েছে সেগুলো বিকৃত। সেগুলি ঐ বিশুদ্ধ অহীর অন্তর্ভুক্ত নয় যা মূসা, ঈসা এবং অন্যান্য নবীগণ আলাইহিমুস সালাম নিয়ে এসেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَنْ يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِنْ يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَا يَسْتَنْقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ (73) يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَنْ يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِنْ يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَا يَسْتَنْقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ: "হে মানুষ! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগের সাথে তা শোনঃ তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা তো কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, এ উদ্দেশ্যে তারা সবাই একত্র হলেও। এবং মাছি যদি কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের কাছ থেকে, এটাও তারা তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও অন্বেষণকৃত কতই না দুর্বল; (৭৩)مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ (74) مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ : তারা আল্লাহ্ কে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি যেমন মর্যাদা দেয়া উচিত ছিল, নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী। (৭৪)"[২২ : ৭৩-৭৪]।
এটা কি যৌক্তিক যে আল্লাহ তা'আলা কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই এই সমস্ত মাখলূককে সৃষ্টি করেছেন? মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময় হওয়া সত্ত্বেও তিনি কি এগুলোকে নিরর্থকভাবে সৃষ্টি করেছেন?
এটা কি যুক্তিযুক্ত যে যিনি আমাদেরকে এত সূক্ষ্মতা ও দক্ষতার সাথে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের জন্য নভোমন্ডল ও পৃথিবীর সমস্ত কিছুকে বশীভূত করেছেন, তিনি আমাদের উদ্দেশ্য ছাড়াই সৃষ্টি করবেন বা আমাদেরকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলির উত্তর ছাড়াই ছেড়ে দিবেন, যেমন: আমরা এখানে কেন? মৃত্যুর পর কী হবে? আমাদেরকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী?
বরং আল্লাহ তা'আলা রসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন যাতে আমরা আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারি। আর তিনি আমাদের কাছ থেকে কী চান তা জানতে পারি!
আল্লাহ রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন আমাদেরকে এ সংবাদ দেওয়ার জন্য যে, আল্লাহ তা'আলা একমাত্র ইবাদতের উপযুক্ত এবং আমরা যেন জানতে পারি কীভাবে তাঁর ইবাদত করতে হবে এবং তাঁর আদেশ ও নিষেধগুলো আমাদের পর্যন্ত পৌঁছাতে এবং আমাদেরকে এমন মূল্যবোধ শেখানোর জন্য যে আমরা যদি সেগুলি মেনে চলি, তবে আমাদের জীবন ভাল হবে, কল্যাণ ও বরকতময় হবে।
আল্লাহ অনেক রাসূল প্রেরণ করেছেন, যেমন: (নূহ, ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসা)। তিনি এ সমস্ত রাসূলকে নিদর্শন ও মুজিযাসমূহ দিয়েছেন, যা তাদের সত্যতা এবং তারা সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে প্রেরিত প্রমাণ করে।
আর রাসূলদের মধ্যে সর্বশেষ হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তাঁর উপরে কুরআন কারীম নাযিল করেছেন।
রাসূলগণ দ্ব্যর্থহীনভাবে আমাদেরকে এই বার্তা দিয়েছেন যে, এই জীবন একটি পরীক্ষা মাত্র আর প্রকৃত জীবন তো মৃত্যুর পরেই হবে।
আর সেখানে মুমিনদের জন্য জান্নাত রয়েছে যারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করেছে, যার কোনো শরীক নেই এবং সকল রাসূলের উপরে ঈমান এনেছে। এবং সেখানে জাহান্নাম রয়েছে যা আল্লাহ কাফিরদের জন্য তৈরি করেছেন যারা আল্লাহর সাথে অন্যান্য ইলাহের উপাসনা করেছে অথবা আল্লাহর রাসূলদের মধ্য হতে কোন একজন রাসূলকে অস্বীকার করেছে।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
يَابَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي فَمَنِ اتَّقَى وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ (35) يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي فَمَنِ اتَّقَى وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ : "হে বনী আদম! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসেন, যারা আমার আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বিবৃত করবেন, তখন যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে এবং নিজেদের সংশোধন করবে, তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (৩৫)وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ (36) وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ : আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে এবং তার ব্যাপারে অহংকার করেছে , তারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।(৩৬)"[৭: ৩৫-৩৬]।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿ أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ ﴾ أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ : "তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমরা তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে না?"[২৩ : ১১৫]।
কুরআন কারীম হল আল্লাহ তা'আলার বাণী, যা তিনি শেষ নবী মুহাম্মাদের উপর নাযিল করেছিলেন। এটি হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে বড় মুজিযা, যা তার নবুওয়াতের সত্যতা প্রমান করে। কুরআনের বিধানসমূহ হক আর তার কাহিনীও সত্য। আল্লাহ অস্বীকারকারীদের এই কুরআনের মতো একটি সূরা তৈরি করার জন্য চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, কিন্তু তারা এর স্বতন্ত্র শৈলী এবং এর শব্দচয়নের অনন্যতার কারণে তা করতে অক্ষম হয়েছিল। অসংখ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং যুক্তি প্রমাণ করে যে, এই কিতাব মানুষের দ্বারা তৈরি করা সম্ভব না, বরং এটি সমগ্র মানবজাতীর পালনকর্তা সুমহান রবের বাণী।
কালের সূচনা থেকেই মানবজাতিকে তাদের রব আল্লাহর দিকে আহবান করার জন্য এবং তাদের কাছে আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ পৌঁছে দেওয়ার জন্য আল্লাহ অসংখ্য রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাদের সকলের দাও'আতই ছিল: 'একমাত্র আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত করা।' যখনই কোন জাতী দীনের কোন অংশ পরিত্যাগ করেছে অথবা রাসূল আনিত তাওহীদের বিধানকে বিকৃত করেছে, তখনই আল্লাহ তা'আলা তাদের পথ ঠিক করা এবং মানুষকে সুষ্ঠু ফিতরাতের উপরে ফিরিয়ে আনার জন্য অন্য রাসূল প্রেরণ করেছেন, যতক্ষণ না শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র মানব জাতীর জন্য কিয়ামাত পর্যন্ত প্রযোজ্য স্থায়ী এমন শরী'আত নিয়ে এসেছেন, যা পূর্বের সকল শরী'আতকে রহিতকারী এবং পূর্ণতাদানকারী। আর মহান রব আল্লাহ তা'আলা নিজেই কিয়ামাত পর্যন্ত এ শরী'আত ও রিসালাতের স্থায়ীত্ব ও অব্যাহত রাখার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
এ কারণে আমরা মুসলিমরা আল্লাহর আদেশ মোতাবেক পূর্ববর্তী সমস্ত রাসূল এবং কিতাবগুলিতে বিশ্বাস করি।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَاۤ أُنزِلَ إِلَیۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَـٰۤىِٕكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ أَحَدࣲ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُوا۟ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَیۡكَ ٱلۡمَصِیرُ﴾ ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَاۤ أُنزِلَ إِلَیۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَـٰۤىِٕكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ أَحَدࣲ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُوا۟ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَیۡكَ ٱلۡمَصِیرُ : "রাসূল তাঁর প্রভুর পক্ষ থেকে যা তাঁর কাছে নাযিল করা হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের উপর। আমরা তাঁর রাসূলগনের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলেঃ আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব। আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।"[2: 285]. [২: ২৮৫]।
আল্লাহই সেই সত্তা যিনি রাসূলদেরকে পাঠিয়েছেন। যে কেউ তাদের একজনের রিসালাতের ব্যাপারে অবিশ্বাস করল, সে তাদের সকলকেই অবিশ্বাস করল। মহান আল্লাহ তা'আলার অহীকে প্রত্যাখ্যান করার চেয়ে মানুষের বড় কোন পাপ নেই; কাজেই জান্নাতে প্রবেশের জন্য সকল রাসূলের প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক।
সুতরাং বর্তমানে প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে আবশ্যক হচ্ছে আল্লাহর সমস্ত রাসূলের প্রতি ঈমান আনায়ন করা। আর এটি সকল রাসূলের শেষ রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরে ঈমান আনা ও তার অনুসরণ করা ব্যতীত সম্ভব হবে না।
আল্লাহ আল-কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন, যে ব্যক্তি তাঁর রাসূলদের মধ্য হতে কোনো রাসূলের প্রতি ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করবে, সে আল্লাহকে অস্বীকারকারী এবং তাঁর অহীকে মিথ্যারোপকারী:
নিচের আয়াতটি পাঠ করুন:"إنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ ورُسُلِهِ ويُرِيدُونَ أنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ ورُسُلِهِ ويَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ ونَكْفُرُ بِبَعْضٍ ويُرِيدُونَ أنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا إنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ ورُسُلِهِ ويُرِيدُونَ أنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ ورُسُلِهِ ويَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ ونَكْفُرُ بِبَعْضٍ ويُرِيدُونَ أنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا : নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে (ঈমানের ব্যাপারে) তারতম্য করতে চায় এবং বলে, 'আমরা কতক-এর উপর ঈমান আনি এবং কতকের সাথে কুফরী করি' আর তারা মাঝামাঝি একটা পথ অবলম্বন করতে চায়,أُولَئِكَ هُمُ الكافِرُونَ حَقًّا وأعْتَدْنا لِلْكَفَرَيْنِ عَذابًا مُهِينًا﴾". أُولَئِكَ هُمُ الكافِرُونَ حَقًّا وأعْتَدْنا لِلْكَفَرَيْنِ عَذابًا مُهِينًا : তারাই প্রকৃত কাফির। আর আমরা প্রস্তুত রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।"[৪: ১৫০-১৫১]।
ইসলাম হল তাওহীদের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার কাছে আত্মসমর্পণ করা, ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করা এবং সন্তুষ্টি ও কবুল করার মাধ্যমে তাঁর শরী'আতকে পালন করা।
আল্লাহ তা'আলা রাসূলদেরকে একটি রিসালাতের জন্যই প্রেরণ করেছেন, তা হচ্ছে: এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান করা, যার কোনো শরীক নেই।
ইসলামই হচ্ছে সকল নবীদের দীন (ধর্ম)। সুতরাং তাদের দীন একই তবে শরী'আত ভিন্ন ভিন্ন। মুসলিমরাই আজকের দিনে একমাত্র সঠিক ধর্মকে মেনে চলছেন, যে দীন সহকারে সমস্ত নবীগণ আগমণ করেছিলেন। এ যুগে ইসলামের বাণী হচ্ছে হক। সুতরাং যে রব ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসা আলাইহিস সালামকে পাঠিয়েছেন, তিনিই রাসূলদের সর্বশেষ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। আর ইসলামের শরী'আত তার পূর্বে আগত সকল শরী'আতকে রহিতকারী হিসেবে এসেছে।
ইসলাম বাদ দিয়ে আজ যে সমস্ত ধর্ম মানুষ অনুসরণ করে, সেগুলি হয় মানবসৃষ্ট ধর্ম অথবা এমন ধর্ম যা মূলত ইলাহী ছিল তারপর মানুষের হাত তাতে বিকৃত এনেছে, ফলে তা কুসংস্কারের ধ্বংসাবশেষ, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পৌরাণিক কাহিনী এবং মানবিক গবেষণালব্ধ বিষয়াদির সংমিশ্রনে পরিণত হয়েছে। পক্ষান্তরে মুসলিমদের আকীদা হলো স্পষ্ট এক আকিদা, যা কখনো পরিবর্তন হয় না। তুমি আল-কুরআনুল কারীমের দিকে তাকিয়ে দেখ, সমস্ত মুসলিম বিশ্বে একই গ্রন্থ।
মহিমান্বিত কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَالنَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ (84) قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَالنَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ : "বলুন, 'আমরা আল্লাহ্তে ও আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং ইব্রাহীম, ইসমা'ঈল, ইসহাক, ইয়া'কূব ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি যা নাযিল হয়েছিল এবং যা মূসা, 'ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাঁদের রবের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছিল তাতে ঈমান এনেছি; আমরা তাঁদের কারও মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী।'وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ 85). وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ : আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।"[৩ : ৮৪-৮৫]।
তুমি জান কী মুসলিমদের উপরে আবশ্যক হচ্ছে যে, তারা আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালামের উপরে ঈমান আনবে, তাকে ভালবাসবে, তাকে সম্মান জানাবে এবং তাঁর সে রিসালাতের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে, যার মূল কথা হলো এক আল্লাহ তা'আলার ইবাদাতের দিকে আহবান জানানো যার কোনো শরীক নেই! মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুজনেই নবী ছিলেন এবং তারা উভয়েই মানুষকে আল্লাহর পথ এবং জান্নাতের পথ দেখানোর জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন।
আমরা বিশ্বাস করি যে, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ প্রেরিত রাসূলদের মধ্যে একজন অন্যতম সম্মানিত রাসূল ছিলেন। আমরা আরো বিশ্বাস করি যে, তিনি অলৌকিকভাবে জন্ম গ্রহণ করেছেন। কুরআনে আল্লাহ তা'আলা সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি ঈসাকে পিতা ব্যতীত সৃষ্টি করেছেন যেভাবে আদমকে তিনি পিতা-মাতা ব্যতীত সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ সকল বস্তুর উপরে ক্ষমতাবান।
আমরা বিশ্বাস করি যে ঈসা ইলাহ (উপাস্য) নন, আবার আল্লাহর পুত্রও নন এবং তিনি ক্রুশবিদ্ধ হননি, বরং তিনি জীবিত। আল্লাহ তা'আলা তাকে নিজের দিকে তুলে নিয়েছেন, যেন শেষ যামানাতে তিনি ন্যায়পরায়ন বিচারক হিসেবে আগমন করেন এবং তিনি মুসলিমদের সাথে থাকবেন। কেননা মুসলিমরাই হচ্ছে ঈসাসহ সমস্ত নবী যে তাওহীদ নিয়ে আগমন করেছেন, তার উপরে ঈমান আনয়নকারী।
আল্লাহ আল-কুরআনুল কারীমে আমাদেরকে সংবাদ প্রদান করেছেন যে, ঈসা আলাইহিস সালামের (রিসালাত) বাণীকে খ্রিস্টানরা পরিবর্তন করে ফেলেছে এবং সেখানে বিপথগামীরা ছিল যারা ইনজিলকে কলুষিত ও পরিবর্তন করেছে এবং ঈসা আলাইহিস সালাম বলেননি এমন সব কথা সেখানে সংযুক্ত করেছে, ইনজিলের বিভিন্ন সংষ্করণ ও তার মধ্যে বিদ্যমান অসংখ্য অসংগতি এ কথা প্রমাণ করে।
আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, ঈসা তাঁর রব আল্লাহর ইবাদত করতেন, তিনি কখনো কাউকে তাঁর ইবাদত করতে বলেননি, বরং তিনি তার উম্মতকে তার সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করতে আদেশ করতেন, কিন্তু শয়তান খ্রিস্টানদেরকে ঈসার ইবাদতকারী বানিয়েছে। কুরআনে আল্লাহ আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করেছে এমন কোন ব্যক্তিকে তিনি কখনো ক্ষমা করবেন না। আর ঈসাও কিয়ামাতের দিনে যারা তার ইবাদাত করেছে, তাদের থেকে নিজেকে সম্পর্কমুক্ত করে তাদেরকে বলবেন, আমি তোমাদেরকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ইবাদতের আদেশ করেছি, আমি তোমাদেরকে আমার ইবাদত করতে বলিনি। এ কথার দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার বাণী:
﴿یَـٰۤأَهۡلَ ٱلۡكِتَـٰبِ لَا تَغۡلُوا۟ فِی دِینِكُمۡ وَلَا تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّۚ إِنَّمَا ٱلۡمَسِیحُ عِیسَى ٱبۡنُ مَرۡیَمَ رَسُولُ ٱللَّهِ وَكَلِمَتُهُۥۤ أَلۡقَىٰهَاۤ إِلَىٰ مَرۡیَمَ وَرُوحࣱ مِّنۡهُۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۖ وَلَا تَقُولُوا۟ ثَلَـٰثَةٌۚ ٱنتَهُوا۟ خَیۡرࣰا لَّكُمۡۚ إِنَّمَا ٱللَّهُ إِلَـٰهࣱ وَ ٰحِدࣱۖ سُبۡحَـٰنَهُۥۤ أَن یَكُونَ لَهُۥ وَلَدࣱۘ لَّهُۥ مَا فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَمَا فِی ٱلۡأَرۡضِۗ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِیلࣰا﴾ یَـٰۤأَهۡلَ ٱلۡكِتَـٰبِ لَا تَغۡلُوا۟ فِی دِینِكُمۡ وَلَا تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّۚ إِنَّمَا ٱلۡمَسِیحُ عِیسَى ٱبۡنُ مَرۡیَمَ رَسُولُ ٱللَّهِ وَكَلِمَتُهُۥۤ أَلۡقَىٰهَاۤ إِلَىٰ مَرۡیَمَ وَرُوحࣱ مِّنۡهُۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۖ وَلَا تَقُولُوا۟ ثَلَـٰثَةٌۚ ٱنتَهُوا۟ خَیۡرࣰا لَّكُمۡۚ إِنَّمَا ٱللَّهُ إِلَـٰهࣱ وَ ٰحِدࣱۖ سُبۡحَـٰنَهُۥۤ أَن یَكُونَ لَهُۥ وَلَدࣱۘ لَّهُۥ مَا فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَمَا فِی ٱلۡأَرۡضِۗ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِیلࣰا : "হে আহলে কিতাবগণ! স্বীয় দ্বীনের মধ্যে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর উপর সত্য ব্যতীত কিছু বলো না। মারইয়াম-তনয় ঈসা মসীহ কেবল আল্লাহ্র রাসূল এবং তার বাণী, যা তিনি মারইয়ামের কাছে পাঠিয়েছিলেন ও তার পক্ষ থেকে রূহ। কাজেই তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলদের উপর ঈমান আন এবং বলো না, তিন! নিবৃত্ত হও, এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। আল্লাহই তো এক ইলাহ; তার সন্তান হবে---তিনি এটা থেকে পবিত্ৰ-মহান। আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই; আর কর্মবিধায়করূপে আল্লাহই যথেষ্ট।"[৪: ১৭১]।
আল্লাহ তা'আলা বলেন:(وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيْنِ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ۚ إِن كُنتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ ۚ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيْنِ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ۚ إِن كُنتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ ۚ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ : "আরও স্মরণ করুন, আল্লাহ্ যখন বলবেন, 'হে মারইয়াম –তনয় 'ঈসা! আপনি কি লোকদেরকে বলেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া আমাকে এবং আমার জননীকে দুই ইলাহরূপে গ্রহণ কর? 'তিনি বলবেন, 'আপনিই মহিমান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার পক্ষে শোভন নয়। যদি আমি তা বলতাম তবে আপনি তো তা জানতেন। আমার অন্তরের কথাতো আপনি জানেন, কিন্তু আপনার অন্তরের কথা আমি জানি না ; নিশ্চয় আপনি অদৃশ্য সম্বদ্ধে সবচেয়ে ভাল জানেন।'"[৫ : ১১৬]।
যে ব্যক্তি আখিরাতে মুক্তি চায়, তার উপরে আবশ্যক হচ্ছে ইসলামে প্রবেশ করা এবং নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা।
যে বাস্তবতার উপরে সমস্ত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম একমত ছিলেন, তাহলো আখিরাতে মুসলিমগণ ছাড়া কেউ নাজাত পাবেন না, যারা আল্লাহ তা'আলার প্রতি ঈমান এনেছেন এবং তার ইবাদতে কাউকে শরীক করেননি এবং আরো ঈমান এনেছেন সকল নবী-রাসূলের প্রতি। সুতরাং যারা নবী মূসা আলাইহিস সালামের সময়ে ছিলেন, তার উপরে ঈমান এনেছেন এবং তার শিক্ষাসমূহ অনুসরণ করেছেন, তারা ছিলেন মুমিন, মুসলিম। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা ঈসা আলাইহিস সালামকে প্রেরণ করার পরে মূসার অনুসারীদের উপরে আবশ্যক হয়ে গেল ঈসা আলাইহিস সালামের উপরে ঈমান আনা এবং তাকে অনুসরণ করা। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈসার উপরে ঈমান আনবে এরাই তখন নেককার মুসলিম আর যে ঈসার উপরে ঈমান আনার বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করবে আর বলবে আমি মূসার দীনের উপরেই অবস্থান করতে থাকব, সে ব্যক্তি মুমিন নয়; কেননা সে এমন একজন নবীর উপরে ঈমান আনা প্রত্যাখ্যান করেছে যাকে আল্লাহ তা'আলা প্রেরণ করেছেন। এরপরে যখন আল্লাহ তা'আলা সর্বশেষ নবী রাসূল মুহাম্মাদকে প্রেরণ করলেন, তখন সবার উপরে আবশ্যক হয়ে গেল তার উপরে ঈমান আনয়ন করা; কাজেই রব হলেন সেই সত্তা যিনি মূসা ও ঈসাকে প্রেরণ করেছেন এবং তিনিই শেষ রাসূল মুহাম্মাদকে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামের (রিসালাতের) বাণী অস্বীকার করবে আর বলবে: আমি মূসা অথবা ঈসার দীনের উপরেই অবস্থান করতে থাকব, সে ব্যক্তি মুমিন নয়।
কোন ব্যক্তির মুসলিমদের সম্মান করার দাবি করা যথেষ্ট নয় এবং আখিরাতে তার নাজাতের জন্য সদকা করা ও গরীবদের সাহায্য করা যথেষ্ট নয়। বরং তাকে আল্লাহ, তাঁর কিতাব, রাসূল এবং শেষ দিনের উপরে ঈমানদার হওয়া জরুরি; যাতে আল্লাহ তার থেকে এগুলো গ্রহণ করেন! আল্লাহকে অস্বীকার করা, তাঁর সাথে শিরক করা, আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত অহীকে প্রত্যাখ্যান করা অথবা শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়তকে প্রত্যাখ্যান করার চেয়ে বড় কোনো পাপ নেই। ইহুদি ও খ্রিস্টানরা, যারা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়ত সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরেও ঈমান আনতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে এবং ইসলামে প্রবেশ করাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে অবস্থান করবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
{إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ أُولَـٰئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ} إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ أُولَـٰئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّة : "নিশ্চয় কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির নিকৃষ্টতম।"[৯৮ : ৬]।
যেহেতু আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য শেষ নবুয়তী বাণী অবতীর্ণ হয়েছে, তাই ইসলাম এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে শ্রবণকারী প্রত্যেক ব্যক্তির উপর তার প্রতি ঈমান আনয়ন করা, তার শরী'আত অনুসরণ করা এবং তার আদেশ ও নিষেধের ব্যাপারে তার আনুগত্য করা ওয়াজিব। অতএব, যে ব্যক্তি এই শেষ নবুয়তী বাণী শুনবে এবং তা প্রত্যাখ্যান করবে, মহান আল্লাহ তার কাছ থেকে কিছুই গ্রহণ করবেন না এবং আখিরাতে তাকে শাস্তি দেবেন। এ কথার দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার বাণী:
﴿وَمَن یَبۡتَغِ غَیۡرَ ٱلۡإِسۡلَـٰمِ دِینࣰا فَلَن یُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِی ٱلۡـَٔاخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَـٰسِرِینَ﴾ وَمَن یَبتَغِ غَیرَ ٱلإِسلَـٰمِ دِینا فَلَن یُقبَلَ مِنهُ وَهُوَ فِی ٱلـَٔاخِرَةِ مِنَ ٱلخَـٰسِرِینَ "আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।"[৩: ৮৫]।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:(قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ ۚ فَإِن تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ) قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ ۚ فَإِن تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ : "বল, 'হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত না করি। আর তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব হিসাবে গ্রহণ না করি'। তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, 'তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম'।"(৩: ৬৪)।
ইসলামে প্রবেশ করতে হলে এই ছয়টি রুকনের উপরে ঈমান আনা আবশ্যক:
আল্লাহ তা'আলার উপরে ঈমান আনয়ন করা এবং তিনিই হলেন সৃষ্টিকর্তা (الخالق), রিযিকদাতা (الرازق), পরিচালনাকারী (المدبر), মালিক (المالك), তাঁর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কেউ নেই, তাঁর কোন স্ত্রী নেই, কোন সন্তান নেই আর একমাত্র তিনিই ইবাদতের হকদার।
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনয়ন করা যে, তারা হলেন আল্লাহর বান্দা। তাদেরকে তিনি নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তাদের কাজ নির্ধারণ করেছেন যে, তারা তাঁর নবীদের কাছে অহী নিয়ে অবতরণ করেন।
সকল কিতাবের প্রতি ঈমান আনয়ন করা যা আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবীদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন, যেমন তাওরাত, ইঞ্জিল এবং সর্বশেষ কিতাব হলো আল- কুরআনুল কারীম।
সকল নবীদের প্রতি ঈমান আনয়ন করা যেমন নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা এবং তাদের সর্বশেষ হলো মুহাম্মাদ। তারা সকলেই মানুষ ছিলেন। তিনি তাদেরকে অহী দ্বারা সাহায্য করেছেন এবং তাদেরকে অনেক নিদর্শন এবং মু'জিযাসমূহ দান করেছেন যা তাদের সত্যতা প্রমাণ করে।
আখিরাত তথা শেষ দিবসে ঈমান আনয়ন করা, যখন আল্লাহ তা'আলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে উঠাবেন এবং তাঁর সৃষ্টির মধ্যে বিচার-ফয়সালা করবেন। তিনি মুমিনদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং কাফেরদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
তাকদীরের উপরে ঈমান আনয়ন করা এবং অতীতে যা কিছু ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে তার সবই আল্লাহ জানেন। সেগুলো আল্লাহ লিখে রেখেছেন। তিনি তা চেয়েছেন এবং সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
ইসলাম হচ্ছে সকল নবীর দীন (ধর্ম), শুধু আরবদের সাথে নির্দিষ্ট দীন নয়।
ইসলামই হচ্ছে দুনিয়াতে প্রকৃত সৌভাগ্য এবং আখিরাতে চিরস্থায়ী নি'আমাতের পথ।
ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা দেহ ও আত্মা উভয়ের চাহিদা পূরণ করতে এবং মানুষের সকল সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
{قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلا يَضِلُّ وَلا يَشْقَى قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلا يَضِلُّ وَلا يَشْقَى : "তিনি বললেন, 'তোমরা উভয়ে একসাথে জান্নাত থেকে নেমে যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। পরে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার প্রদর্শিত সৎপথের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ-কষ্ট পাবে না।وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى : 'আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমরা তাকে কিয়ামাতের দিন জমায়েত করব অন্ধ অবস্থায়।"[২০: ১২৩-১২৪]।
ইসলামে প্রবেশ করার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো:
- মানুষ আল্লাহর বান্দা হয়ে পার্থিব জীবনে সফলতা ও সম্মান অর্জন করবে, অন্যথায় সে শয়তান ও কামনা-বাসনার গোলাম হয়ে যাবে।
- সর্বশ্রেষ্ঠ সাফল্য হচ্ছে আখিরাতে জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে নাজাত পাওয়া, জান্নাতে প্রবেশ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতে স্থায়ী হয়ে সফলকাম হবে।
- আল্লাহ যাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তারা মৃত্যু অথবা কোনো প্রকার অসুস্থতা অথবা ব্যথা অথবা শোক অথবা বার্ধক্য ছাড়াই চিরস্থায়ী নি'আমাতে অবস্থান করবে এবং তারা যা চাবে তাই পাবে।
- জান্নাতে এমন উপভোগ্য রয়েছে যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তার কল্পনাও হয়নি।
এর দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার বাণী:﴿مَنۡ عَمِلَ صَـٰلِحࣰا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنࣱ فَلَنُحۡیِیَنَّهُۥ حَیَوٰةࣰ طَیِّبَةࣰۖ وَلَنَجۡزِیَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ﴾ مَنۡ عَمِلَ صَـٰلِحࣰا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنࣱ فَلَنُحۡیِیَنَّهُۥ حَیَوٰةࣰ طَیِّبَةࣰۖ وَلَنَجۡزِیَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ : "মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, অবশ্যই আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেব।"[১৬: ৯৭]।
- (ইসলাম প্রত্যাখ্যান করলে) মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ ইলম ও জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হবে, তা হল আল্লাহ সম্পর্কে ইলম ও জ্ঞান। এছাড়াও সে আল্লাহর প্রতি ঈমান হারাবে, যা এই দুনিয়াতে মানুষকে নিরাপত্তা ও প্রশান্তি এবং আখিরাতে অনন্ত নি'আমাত দান করে।
- মানুষ সবচেয়ে মহান কিতাব যা আল্লাহ মানবজাতির জন্য অবতীর্ণ করেছেন তা জানা থেকে এবং এই মহান গ্রন্থের প্রতি ঈমান থেকে বঞ্চিত হবে।
- তারা সম্মানিত নবীদের প্রতি ঈমান থেকে বঞ্চিত হবে, যেভাবে তারা কিয়ামাতের দিনে তাদের সঙ্গী হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। আর তারা জাহান্নামের আগুনে শয়তান, অপরাধী এবং ত্বাগুতদের সঙ্গী হবে। সেটি কী নিকৃষ্ট আবাসস্থল আর কী নিকৃষ্ট সঙ্গী!
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
قُلْ إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَلا ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ (15) قُلْ إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَلا ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ : "বলুন, ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা কিয়ামতের দিন নিজেদের ও নিজেদের পরিজনবর্গের ক্ষতিসাধন করে। জেনে রাখ, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি।" (১৫)لَهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِنَ النَّارِ وَمِنْ تَحْتِهِمْ ظُلَلٌ ذَلِكَ يُخَوِّفُ اللَّهُ بِهِ عِبَادَهُ يَا عِبَادِ فَاتَّقُونِ } . لَهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِنَ النَّارِ وَمِنْ تَحْتِهِمْ ظُلَلٌ ذَلِكَ يُخَوِّفُ اللَّهُ بِهِ عِبَادَهُ يَا عِبَادِ فَاتَّقُونِ : "তাদের জন্য থাকবে তাদের উপরের দিকে আগুনের আচ্ছাদন এবং নিচের দিকেও আচ্ছাদন। এ দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমারই তাকওয়া অবলম্বন কর।"[৩৯: ১৫-১৬]।
দুনিয়া স্থায়ী আবাস নয়...
দুনিয়ার প্রতিটি সৌন্দর্য অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং সমস্ত প্রবৃত্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে...
অচিরেই একটি দিন আসবে যেখানে তুমি এ পৃথিবীতে যা করেছ সে সমস্ত কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে, সে দিনটি হচ্ছে কিয়ামাতের দিন। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:{وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لاَ يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلاَ كَبِيرَةً إِلاَّ أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلاَ يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا} وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لاَ يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلاَ كَبِيرَةً إِلاَّ أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلاَ يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا :"আর উপস্থাপিত করা হবে 'আমলনামা, তখন তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে দেখবেন আতংকগ্রস্ত এবং তারা বলবে, 'হায়, দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! এটা তো ছোট বড় কিছু বাদ না দিয়ে সব কিছুই হিসেব করে রেখেছে।' আর তারা যা আমল করেছে তা সামনে উপস্থিত পাবে; আর আপনার রব তো কারো প্রতি যুলুম করেন না।"[১৮: ৪৯]।
আল্লাহ তা'আলা সংবাদ দিয়েছেন যে, যারা ইসলাম গ্রহণ করবে না তাদের আবাসস্থল হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
সুতরাং ক্ষতিটি সাধারণ নয়, বরং অত্যন্ত মারাত্মক, আল্লাহ তা'আলা বলেন:{وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ } وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ : "আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।"[৩: ৮৫]।
কাজেই ইসলাম একমাত্র দীন যা ছাড়া অন্য কোনো দীন আল্লাহ গ্রহণ করবেন না।
সুতরাং আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই আমরা ফিরে যাব। আর এই পৃথিবী হলো আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা।
আপনি নিশ্চিত হোন: এ দুনিয়া স্বপ্নের মতই ছোট ... কেউ জানে না যে সে কখন মারা যাবে!
তুমি তোমার স্রষ্টাকে কী জবাব দেবে, যখন তিনি তোমাকে কিয়ামাতের দিনে জিজ্ঞাসা করবেন: তুমি কেন সত্যকে অনুসরণ করনি? কেন সর্বশেষ নবীকে অনুসরণ করনি?
কিয়ামাতের দিন তোমার রবকে কী জবাব দিবে, অথচ তিনি তোমাকে ইসলামের সাথে কুফরীর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে কাফেরদের পরিণতি জাহান্নামে চিরস্থায়ী ধ্বংস?
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾ وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ : "আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।"[2: 39]. [২: ৩৯]।
আল্লাহ তা'আলা আমাদের জানিয়েছেন যে, মানুষেরা যেই পরিবেশে বসবাস করে তার ভয়ে তাদের অধিকাংশ ইসলাম গ্রহণ করা ত্যাগ করবে।
অনেকেই ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে কারণ তারা তাদের বিশ্বাস পরিবর্তন করতে চায় না, যেটা তারা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং তারা যেগুলোর সাথে অভ্যস্ত। আবার তাদের অনেককে গোঁড়ামি এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বাতিলের পক্ষপাতিত্ব বাধা দেয়।
আর এসব ব্যক্তিদের জন্য কোন ওযর থাকবে না আর তারা অচিরেই কোন প্রমাণ ছাড়াই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে।
সুতরাং একজন নাস্তিকের পক্ষে এটা বলাও বৈধ হবে না যে, আমি নাস্তিকই থাকব কারণ আমি নাস্তিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি! বরং তাকে আল্লাহ যে বিবেক দান করেছেন তা ব্যবহার করতে হবে, আসমান-যমীনের বিশালতা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এবং তার সৃষ্টিকর্তা যে বিবেক তাকে দিয়েছেন, তা দিয়ে চিন্তা করবে যে, এ মহাবিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। অনুরূপভাবে যারা পাথর ও মূর্তি পূজা করে তাদের জন্য তাদের পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করার কোন বৈধ অজুহাত নেই। বরং তাদের অবশ্যই সত্যের সন্ধান করতে হবে এবং নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে: আমি কীভাবে এমন একটি জড় বস্তুর উপাসনা করতে পারি যে আমাকে শুনতে পায় না, আমাকে দেখে না অথবা আমার কোন উপকারও করতে পারে না?!
একইভাবে, একজন খ্রিস্টান যে এমন বিষয়গুলিতে বিশ্বাস করে যা সঠিক স্বাভাবিক স্বভাব এবং বিবেক/যুক্তির বিরোধী, তাকেও অবশ্যই নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে: রব বা আল্লাহর পক্ষে অন্যের পাপের জন্য তার নির্দোষ পুত্রকে হত্যা করা কিভাবে ন্যায়সঙ্গত হতে পারে?! এটা অন্যায়! মানুষ কিভাবে প্রভুর পুত্রকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করতে পারে?! প্রভু কি তাদের পুত্রকে হত্যা করার অনুমতি না দিয়ে মানবতার পাপ ক্ষমা করতে সক্ষম নন? প্রভু কি তার পুত্রকে রক্ষা করতে সক্ষম নন?
সুতরাং পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মিথ্যার অন্ধ আনুগত্য থেকে মুক্ত হয়ে সত্যের পথে চলা একজন বিবেকবান ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿وَإِذَا قِیلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡا۟ إِلَىٰ مَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ قَالُوا۟ حَسۡبُنَا مَا وَجَدۡنَا عَلَیۡهِ ءَابَاۤءَنَاۤۚ أَوَلَوۡ كَانَ ءَابَاۤؤُهُمۡ لَا یَعۡلَمُونَ شَیۡـࣰٔا وَلَا یَهۡتَدُونَ﴾ وَإِذَا قِیلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡا۟ إِلَىٰ مَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَإِلَى ٱلرَّسُولِ قَالُوا۟ حَسۡبُنَا مَا وَجَدۡنَا عَلَیۡهِ ءَابَاۤءَنَاۤۚ أَوَلَوۡ كَانَ ءَابَاۤؤُهُمۡ لَا یَعۡلَمُونَ شَیۡـࣰٔا وَلَا یَهۡتَدُونَ : "আর যখন তাদেরকে বলা হয়, 'আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে ও রাসূলের দিকে আস, তখন তারা বলে, "আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যেটাতে পেয়েছি সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। যদিও তাদের পূর্বপুরুষরা কিছুই জানত না এবং সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি?"[৫: ১০৪]।
যে ইসলামে প্রবেশ করতে চায়, কিন্তু তার চারপাশের পরিবেশকে ভয় পায়, সে গোপনে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে এবং তার ইসলামকে লুকিয়ে রাখতে পারে যতক্ষণ না আল্লাহ তার জন্য একটি ভাল পথের ব্যবস্থা করেন যেভাবে সে স্বাধীন হতে পারে এবং তার ইসলাম প্রকাশ করতে পারে।
সুতরাং তোমার উপরে অবিলম্বে ইসলাম গ্রহণ করা অবশ্য কর্তব্য, তবে তোমার আশেপাশের লোকদেরকে তোমার ইসলাম গ্রহণ অবহিত করা বা তা প্রচার করা বাধ্যতামূলক নয়, যখন এটি তোমার ক্ষতির কারণ হয়।
তুমি জেনে রেখ! তুমি ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথে কোটি কোটি মুসলিমের ভাই হয়ে যাবে। তুমি তোমার দেশের মসজিদ বা ইসলামিক কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করতে পার এবং তাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও সহায়তা চাইতে পার, এটি তাদের আনন্দের কারণ হবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
{وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِب} وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِب : "আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য বের হওয়ার পথ তৈরী করে দেন, আর তিনি তাকে রিযিক দেন যেখান থেকে সে ভাবতেও পারে না।"[৬৫: ২-৩]।
তোমার সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করা,- যিনি তোমাকে তাঁর সমস্ত নিয়ামত দান করেছেন, তোমাকে মাতৃগর্ভে ভ্রূণ থাকাকালীন রিজিক দিতেন এবং এখন তুমি যে নিঃশ্বাস নিচ্ছ তা তিনিই দান করছেন, মানুষকে খুশি করার চেয়ে কি তোমার জন্য বেশী গুরুত্বপূর্ণ নয়?
ক্ষণস্থায়ী সুখ বিসর্জন দিয়ে ইহকাল ও পরকালের সফলতা অর্জন কি সার্থক নয়? আল্লাহর কসম, এটা অবশ্যই সার্থক!
অতএব, তুমি তোমার অতীতকে তোমার ভুল পথ সংশোধন এবং সঠিক কাজ করতে বাধা হতে দিবে না।
আজই একজন সত্যিকারের মুমিন (বিশ্বাসী) হয়ে যাও এবং তোমাকে সত্য অনুসরণে বাধা দিতে শয়তানকে সুযোগ দিয়ো না।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
{يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنزلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا (174) يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنزلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا : "হে লোকসকল! তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের কাছে প্রমাণ এসেছে এবং আমরা তোমাদের প্রতি স্পষ্ট জ্যোতি নাযিল করেছি।" (১৭৪)فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا (175) } فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا : "সুতরাং যারা আল্লাহতে ঈমান এনেছে এবং তাঁকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করেছে তাদেরকে তিনি অবশ্যই তাঁর দয়া ও অণুগ্রহের মধ্যে দাখিল করবেন এবং তাদেরকে সরল পথে তাঁর দিকে পরিচালিত করবেন।" (১৭৫)[৪: ১৭৪-১৭৫]।
যা উল্লেখ করা হয়েছে তা যদি তোমার ক্ষেত্রে যৌক্তিক হয় এবং তুমি যদি তোমার অন্তরে সত্যকে চিনতে পার, তাহলে তোমার উচিত মুসলিম হয়ে প্রথম ধাপ অতিক্রম করা। তুমি কি চাও যে, আমি তোমাকে তোমার জীবনের সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করি এবং কিভাবে একজন মুসলিম হতে হয় সে বিষয়ে তোমাকে পথ-নির্দেশ দিতে পারি?
তোমার পাপ যেন তোমাকে ইসলামে প্রবেশ করতে বাধা না দেয়। কুরআনে আল্লাহ আমাদেরকে বলেছেন যে, কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার সৃষ্টিকর্তার কাছে তওবা করে, তাহলে তিনি মানুষের পাপকে ক্ষমা করবেন। এটা স্বাভাবিক যে, তুমি ইসলাম গ্রহণ করার পরেও কিছু পাপ করে ফেলবে কেননা আমরা মানুষ এবং আমরা কোন মাসূম (বেগুনাহ) ফেরেশতা নই। তবে আমাদের জন্য যা প্রয়োজন তা হল আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব এবং তার কাছে তওবা করব। এবং যদি আল্লাহ দেখেন যে তুমি সত্য গ্রহণ দ্রুত করেছ এবং ইসলামে প্রবেশ করেছ এবং দুটি সাক্ষ্য পাঠ করেছ, তাহলে তোমাকে তিনি অন্যান্য পাপ পরিত্যাগ করতে সাহায্য করবেন। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে অগ্রসর হবে এবং সত্যকে অনুসরণ করবে, আল্লাহ তাকে আরও কল্যাণের দিকে পরিচালিত করবেন, তাই এখনই ইসলামে প্রবেশ করতে দ্বিধা করো না।
এর দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার বাণী:﴿قُل لِّلَّذِینَ كَفَرُوۤا۟ إِن یَنتَهُوا۟ یُغۡفَرۡ لَهُم مَّا قَدۡ سَلَفَ﴾ قُل لِّلَّذِینَ كَفَرُوۤا۟ إِن یَنتَهُوا۟ یُغۡفَرۡ لَهُم مَّا قَدۡ سَلَفَ : "যারা কুফরী করে তাদেরকে বলুন, যদি তারা বিরত হয় তবে যা আগে হয়ে গেছে আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন;"[৮: ৩৮]।
ইসলাম গ্রহণ করার কাজটি খুবই সহজ এবং এতে কোনো সাধনা, আনুষ্ঠানিকতা অথবা কারো উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। কোন ব্যক্তি অর্থ জেনে এবং বিশ্বাসের সাথে শুধুমাত্র এ দুটি সাক্ষ্য উচ্চারণ করবে: (أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدًا رسول الله) "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল।" যদি সেগুলি আরবীতে বলতে পার, তাহলে ভালো, অন্যথায় যদি তোমার জন্য কষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তোমার নিজের ভাষাতে বলাই যথেষ্ট হবে। আর এটুকুর মাধ্যমেই তুমি একজন মুসলিম হয় যাবে। তারপরে তোমার উপরে আবশ্যক হবে তোমার দীন (ধর্ম) শিখে নেওয়া, যা অচিরেই দুনিয়াতে তোমার সৌভাগ্য এবং আখিরাতে তোমার নাজাতের উপায় হবে।
ইসলাম সম্পর্কে আরো তথ্য জানার জন্য আমি তোমাকে এই ওয়েবসাইট দেখার পরামর্শ দিচ্ছি:
.... ভাষায় কুরআন কারীমের অর্থানুবাদের লিংক:
ইসলাম কীভাবে অনুশীলন করতে হবে এটা শেখার জন্য আমি তোমাকে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পরামর্শ দিচ্ছি:
কে আমাকে সৃষ্টি করেছেন? এবং কেন করেছেন ?প্রতিটি বস্তুই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের ওপর প্রমাণ বহন করে।
সুমহান রব আল্লাহ তা'আলার সিফাত (গুণাবলী)
মা'বূদ (ইবাদাতের হকদার) রবকে অবশ্যই পূর্ণতার গুণে গুণান্বিত হওয়া চাই
এটা কী যৌক্তিক যে সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে অহী ছাড়াই ছেড়ে দিবেন?
কোন ব্যক্তি সকল রাসূলদের উপরে ঈমান আনা ব্যতীত মুমিন হতে পারে না।
মুসলিমরা ঈসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে কী বিশ্বাস রাখে?
মুসলিম হতে হলে আমাকে কী করতে হবে?
আমি ইসলামে প্রবেশ করে কী উপকার হাসিল করব?
ইসলাম প্রত্যাখ্যান করলে আমি কী হারাব?
তাই সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করো না!
যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে বাপ-দাদার অনুসরণ করে, তাদের কোন ওযর থাকবে না।
তোমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তুমি কী প্রস্তুত?