Description
ইসলামের রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
އެހެނިހެން ތަރުޖަމާތައް 61
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে
এটি ইসলামের রাসূল মুহাম্মদ [১] সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত। এতে আমি তাঁর নাম, বংশ, জন্মস্থান, বিবাহ, রিসালাত, যার দিকে তিনি আহ্বান করেছিলেন, তাঁর নবুওয়াতের নিদর্শনাবলী, তাঁর শরী'আত এবং তাঁর ব্যাপারে তাঁর শত্রুপক্ষের অবস্থান তুলে ধরব।
ইসলামের রাসূল হলেন মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আবদুল মুত্তালিব ইবনু হাশিম। যিনি ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম আলাইহিমুস সালামের বংশধর।আল্লাহর নবী ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম সিরিয়া থেকে মক্কায় আগমন করেন। সাথে ছিলেন তাঁর স্ত্রী হাজিরা ও তাঁর কোলের পুত্র সন্তান ইসমাঈল 'আলাইহিস সালাম। উভয়কেই তিনি আল্লাহর আদেশক্রমে মক্কায় রেখে গেলেন। যখন শিশু ইসমাঈল যৌবনে পদার্পণ করলেন,তখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কায় আগমন করলেন।এরপরে তিনি ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল আলাইহিমাস সালাম বাইতুল হারাম তথা কা'বা ঘর তৈরী করলেন। কা'বা ঘরকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষ জড়ো হতে থাকল। এক পর্যায়ে মক্কা নগরী বিশ্বজগতের রব আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীনের বিশেষ বান্দাগণ যারা হজ্জ আদায়ের ব্যাপারে অধিক আগ্রহী ছিল, তাঁদের আসা-যাওয়ার লক্ষ্যে পরিণত হল। এভাবে মানুষ যুগের পর যুগ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আদর্শের ভিত্তিতে আল্লাহর ইবাদত ও তাওহীদের পথে চলতে লাগল।এরপরে সেখানে মানুষের মধ্যে বিচ্যুতি দেখা দিলো। ফলশ্রুতিতে আরব উপদ্বীপের অবস্থা তাই হল, যা পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলোর ছিল। যেখানে বিভিন্নভাবে পৌত্তলিকতা তথা মূর্তিপূজা,কন্যাসন্তানদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া থেকে শুরু করে মহিলাদের প্রতি অত্যাচার,মিথ্যা অপবাদ,মদ পান করা,অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া,এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা ও সুদ গ্রহণসহ সকল অন্যায় কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে ঘটত।এই পরিবেশে সে স্থানে ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে ইসমাঈল ইবন ইবরাহীম আলাইহিমাস সালামের বংশসূত্র থেকে ইসলামের রাসূল মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা তাঁর জন্মের পূর্বেই মারা যান। তাঁর মাতা তাঁর ছয় বছর বয়সে মারা যান। এরপর তাঁর চাচা আবু তালিব তাঁর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এই সময় থেকে তিনি দরিদ্র ও এতিম অবস্থায় জীবনযাপন করতে থাকেন। তিনি নিজ হাতে আহার করতেন এবং নিজ হাতেই আয় করতেন।
যখন তাঁর বয়স পঁচিশ বছর, মক্কার সম্ভ্রান্ত নারী খাদিজাহ বিনতে খুওয়াইলিদ রাদিয়াল্লাহু 'আনহাকে তিনি বিবাহ করেন। তাঁর থেকে তিনি চার কন্যা ও দুইটি পুত্র সন্তান লাভ করেন। তাঁর পুত্র সন্তানগণ তাঁদের শৈশবেই মারা যান। স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের সাথে তাঁর ব্যবহার ছিল অত্যন্ত ভালোবাসা ও হৃদ্যতায় ভরপুর। এজন্য তাঁর স্ত্রী খাদিজাহ রাদিয়াল্লাহু 'আনহা তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। একইভাবে তিনিও তার সাথে ভালোবাসার বিনিময় করতেন। তিনি তার মৃত্যুর পরেও দীর্ঘ বছর পর্যন্ত তাঁকে ভুলতে পারেননি। তিনি ছাগল যবাই করে তার অংশ খাদিজাহ রাদিয়াল্লাহু 'আনহার বান্ধবীদের মাঝে বন্টন করে দিতেন। যা ছিল তাদের জন্য আপ্যায়ন, খাদিজাহ রাদিয়াল্লাহু 'আনহার প্রতি তাঁর সম্মান ও মমতা প্রকাশ এবং তার ভালোবাসাকে স্মৃতিবিজড়িত করে রাখার লক্ষ্যে।
রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগতভাবেই মহৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তাঁর জাতি তাঁকে 'বিশ্বস্ত সত্যবাদী' উপাধি প্রদান করেন। তিনি মহৎ কর্মগুলোতে তাদের সাথে সম্পৃক্ত থাকতেন। কিন্তু তাদের প্রতিমা পূজা সংক্রান্ত বিষয়গুলো তিনি ঘৃণা করতেন এবং উক্ত বিষয়ে তিনি তাদের সাথে অংশগ্রহণ করতেন না।
তিনি মক্কায় থাকাকালে যখন চল্লিশ বছরে পদার্পণ করলেন, আল্লাহ তা'আলা তাকে রাসূল হিসেবে নির্বাচন করলেন। এরপরে তার নিকট মহান ফিরিশতা জিবরীল 'আলাইহিস সালাম কুরআনের নাযিলকৃত প্রথম সূরার কিছু অংশ নিয়ে আগমন করলেন। উক্ত অংশটুকু হল আল্লাহ তা'আলার এই বাণীগুলো:(اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ (1) "পড়ুন, আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন (১)خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ (2) সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবদ্ধ রক্ত হতে (২)اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ (3) পড়ুন, আর আপনার রব মহামহিমান্বিত (৩)الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ (4) যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন (৪)عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ (5)) শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।" (৫)[সূরা আল-'আলাক: ১-৫]এরপরে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হৃদয়ে স্বীয় স্ত্রী খাদিজাহ রাদিয়াল্লাহু 'আনহার নিকট ফিরে আসলেন। অতপর তিনি তাকে পুরো ঘটনা খুলে বললেন। তখন খাদিজাহ রাদিয়াল্লাহু 'আনহা তাকে শান্ত করলেন এবং তাকে নিয়ে চাচার ছেলে ওরাকাহ ইবন নাওফাল – যিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে তাওরাত ও ইনজীল অধ্যায়ন করেছিলেন - এর নিকট গেলেন। তিনি তাকে বললেন: হে আমার চাচাত ভাই, আপনার ভাতিজা থেকে শুনে দেখুন কী হয়েছে। তখন ওরাকাহ তাকে বললেন: হে আমার ভাতিজা, তুমি কী দেখছ? তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেখেছেন তা তাকে অবহিত করলেন। তখন ওরাকাহ তাঁকে বললেন:"এই সেই মহান বার্তাবাহক, যিনি মূসা 'আলাইহিস সালামের উপরে আল্লাহর কিতাব নাযিল করেছেন। হায়, যদি আমি সেই দিন শক্তিশালী যুবক হতাম। হায় আমি যদি সেই দিন জীবিত থাকতাম, যেই দিন তোমার জাতি তোমাকে বের করে দিবে! তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: "তারা কি আমাকে বের করে দিবে?" তিনি বললেন: হ্যাঁ, তুমি যা নিয়ে আগমন করেছ, তা নিয়ে যে কোনো ব্যক্তি আগমন করা মাত্রই, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে। যদি সেই দিন আমার জীবনে আসে, তাহলে আমি তোমাকে অত্যন্ত জোরালোভাবে সাহায্য করব।"[২]
মক্কায় তাঁর উপরে ধারাবাহিকভাবে কুরআন নাযিল হতে থাকল। জিবরীল 'আলাইহিস সালাম আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট থেকে অহী নিয়ে অবতরণ করতে থাকেন। যা এ প্রবন্ধে বিস্তারিতভাবে আসবে।
তিনি তাঁর জাতিকে ইসলামের দিকে আহ্বানের কার্যক্রম চলমান রাখলেন। কিন্তু তাঁর জাতি তাঁর সাথে বিরোধিতা ও বিবাদে লিপ্ত হল। আর রিসালাতের দায়িত্ব থেকে দূরে থাকার বিনিময়ে তারা তাকে সম্পদ ও রাজত্বের প্রস্তাব পেশ করল। তিনি এ সকল প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। আর তারা তাকে তাই বলল, যা তার পূর্ববর্তী রাসূলদেরকে নেতৃবর্গ বলেছিল: যাদুকর, মিথ্যুক, মিথ্যা রচনাকারী, আর তার জন্য পরিবেশকে সংকীর্ণ করে দিল। তাঁর পবিত্র শরীরের উপরে তারা আক্রমণ করল এবং তাঁর অনুসারীদের উপরে জুলুম নির্যাতন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল।আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আল্লাহর পথে দা'ওয়াতের কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেন। তিনি হজ্জের মৌসুম ও 'আরবের মৌসুমী বাজারকে লক্ষ্য করে কার্যক্রম চালাতেন। সেখানে মানুষের সাথে সাক্ষাত করে তাদের সামনে ইসলাম পেশ করতেন। কাউকে তিনি দুনিয়া বা রাষ্ট্র ক্ষমতার প্রলোভন দেখাতেন না। কাউকে তরবারির ভয়ও দেখাতেন না। যেহেতু তার কোনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাও ছিল না। আবার তিনি কোনো বাদশাহও ছিলেন না। তিনি দা'ওয়াতের প্রথম দিকেই তাকে যেই মহান কুরআন দান করা হয়েছিল, সেই কুরআনের ন্যায় গ্রন্থ নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। এই কুরআন দ্বারা তিনি প্রতিপক্ষদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে থাকলেন। ফলে এক পর্যায়ে তার প্রতি সাহাবায়ে কেরাম –রদিয়াল্লাহু আনহুম আজমা'ঈন এর একটি দল ঈমান আনলেন।মক্কায় আল্লাহ তা'আলা তাকে একটি মহান নিদর্শন দ্বারা সম্মানিত করলেন, তা হল: ইসরা তথা:মক্কা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়ে সেখান থেকে উর্ধ্বাকাশে আরোহণ (মি'রাজ) করালেন। আর এটি জানা বিষয় যে, আল্লাহ তা'আলা আসমানে ইলয়াস (মতান্তরে)ও ঈসা আলাইহিমাস সালামকে উঠিয়ে নিয়েছেন। যেমনটি মুসলিম ও খ্রিস্টানদের গ্রন্থগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমানে সালাতের ব্যাপারে আদেশপ্রাপ্ত হলেন। এটাই সেই সালাত, যা মুসলিমরা প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করে। মক্কা মুকাররামায় আরেকটি মহান অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়, আর তা হল চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়া, এমনকি মুশরিকরা তা স্পষ্টরূপে অবলোকন করেছিল।
তাঁর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ও তাঁর কাছ থেকে মানুষকে দূরে সরানোর জন্য কুরাইশ কাফেররা তাঁকে বাধা দেওয়ার সকল প্রকার মাধ্যম ব্যবহার করেছিলো। তারা অলৌকিক ঘটনাবলী প্রদর্শনের দাবির ক্ষেত্রে চরম পর্যায়ের একগুঁয়েমিপনা মনোভাব দেখালো। এমনকি তারা ইহুদীদের কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা পর্যন্ত করেছে; যাতে করে তারা তাদেরকে এমন সব প্রমাণ দ্বারা সহযোগিতা করে, যেগুলোর দ্বারা তাঁর সাথে বিতর্ক করা এবং তার নিকট থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার ক্ষেত্রে তাদের কাজে আসে।
যখন মুমিনদের প্রতি কুরাইশ কাফেরদের নিপীড়ন স্থায়ী রূপ ধারণ করল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে হাবশায় হিজরতের আদেশ দিলেন। আর তাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: 'সেখানে এমন একজন ন্যায়পরায়ন বাদশাহ আছেন, যার নিকট কোনো ব্যক্তি নির্যাতিত হয় না।' তিনি ছিলেন একজন খৃস্টান বাদশাহ। তখন তাদের মধ্যে দুইটি দল হাবশায় হিজরত করলেন। যখন মুহাজিরগণ হাবশায় পৌঁছলেন, তারা নাজ্জাশী বাদশার নিকট মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত দীনকে উপস্থাপন করলেন। তখন নাজ্জাশী বাদশাহ ইসলাম গ্রহণ করে বললেন: 'আল্লাহর শপথ এই দীন এবং মূসা আলাইহিস সালামের আনিত দীন একই দীপাধার (উৎস) থেকে নির্গত। আর মূসার কওমও তাকে এবং তার সঙ্গীদেরকে অবিরাম কষ্টের মাঝে নিপতিত করেছিল।'
হজ্জের মৌসুমে মদীনা থেকে আগত একটি দল তার প্রতি ঈমান আনায়ন করে তারা তার কাছে ইসলামের উপরে এবং তিনি মদীনাতে গেলে (তাকে) সাহায্য করার ব্যাপারে বাই'আত গ্রহণ করে। মদীনার নাম ছিল "ইয়াছরিব"; যারা (হাবশায় না গিয়ে) মক্কাতে অবস্থানরত ছিল, তাদেরকে তিনি মদীনায় হিজরত করার অনুমতি দেন। ফলে তারা হিজরত করেন আর মদীনায় ইসলাম প্রসার লাভ করতে থাকে। এমনকি সেখানে এমন একটি ঘরও অবশিষ্ট থাকেনি, যেখানে ইসলাম প্রবেশ করেনি।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আল্লাহর পথে আহ্বান করে নবুওয়াতী জীবনের তেরটি বছর অতিবাহিত করার পরে আল্লাহ তা'আলা তাঁকে মদীনায় হিজরত করার অনুমতি দেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করেন এবং আল্লাহর পথের দা'ওয়াত অব্যাহত রাখেন। বিরামহীন গতিতে তিনি দা'ওয়াতের কার্যক্রম চালিয়ে যান। আর ইসলামী শরী'আত (বিধি-বিধান) পর্যায়ক্রমে নাযিল হতে থাকে। এরপরে তিনি নিজ দূতগণকে পত্র-চিঠিসহকারে বিভিন্ন গোত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিকট এবং রাজা-বাদশাহদের নিকট প্রেরণ করতে শুরু করেন, তাদেরকে ইসলামের পথে আহ্বানের উদ্দেশ্যে। যাদের নিকট তার পত্র প্রেরণ করা হয়েছিল তাদের মাঝে অন্যতম হল: রোম সম্রাট, পারস্যের সম্রাট, মিসরের বাদশাহ।
মদীনাতে একদা সূর্যগ্রহণের ঘটনা ঘটে, ফলে মানুষ ভীত হয়ে পড়ে। আর ঘটনাচক্রে সেই দিনটি ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্র ইবরাহীমের মৃত্যুদিবস। তখন মানুষ বলতে শুরু করল: ইবরাহীমের মৃত্যুর ফলে সূর্যগ্রহণ হচ্ছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:إن الشمس والقمر لا يكسفان لموت أحد، ولا لحياته، ولكنهما من آيات الله، يخوف الله بهما عباده "নিশ্চয় সূর্যে এবং চন্দ্রে কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে গ্রহণ লাগে না; বরং উভয়টিই আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন। আল্লাহ তা'আলা এদের দ্বারা তার বান্দাদেরকে ভয় দেখিয়ে থাকেন।" [৩]সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি ভণ্ড প্রতারক হতেন, তাহলে তিনি উক্ত ধারণাটিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ক্ষেত্রে মানুষকে তৎক্ষণাৎ ভয় দেখাতেন এবং বলতেন: নিশ্চয় সূর্যে গ্রহণ লেগেছে একমাত্র আমার পুত্রের মৃত্যুর কারণেই। তাহলে যারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে, তাদের অবস্থা কত ভয়ঙ্কর হতে পারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার রব আল্লাহ তা'আলা সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন পরিপূর্ণ চারিত্রিক গুণাবলীর দ্বারা। আল্লাহ তা'আলা তাঁর গুণাবলি নিম্নোক্ত এ আয়াতে বর্ণনা করেছেন:(وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ) "আর নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের উপর রয়েছেন।"[সূরা আল-কলাম: ৪]সুতরাং তিনি ছিলেন প্রতিটি সৎ গুণের অধিকারী, যেমন: সততা, একনিষ্ঠতা, বীরত্ব, ন্যায়পরায়ণতা, অঙ্গীকার পূরণ এমনকি বিরোধীপক্ষের সাথেও, দানশীলতা, তিনি ফকীর-মিসকীন, বিধবা ও অসহায় ব্যক্তিদেরকে দান করতে পছন্দ করতেন। এছাড়াও তাদের হিদায়াত প্রাপ্তির ব্যাপারে আকাঙ্খা, তাদের প্রতি মমতা ও বিনয় প্রদর্শন। এমনকি কোনো ভিনদেশী আগন্তুক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার সাহাবীদের মাঝে অবস্থান করা সত্ত্বেও তাকে চিনতে না পেরে তাকে খুঁজত এবং তার সহাবীগণকে প্রশ্ন করত যে, "তোমাদের মাঝে মুহাম্মাদ কে?"
শত্রু-বন্ধু, পরিচিত-অপরিচিত, ছোট-বড়, পুরুষ-নারী ও পশু-পাখি সকলের সাথেই তার আচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁর স্বভাব ছিল মহত্ত্ব ও মহানুভবতার প্রতীক।
যখন আল্লাহ তা'আলা নিজের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় রিসালাতের দায়িত্ব পালনে চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হলেন, তখন তেষট্টি বছর বয়সে তিনি মারা যান। তাঁর চল্লিশ বছর অতিবাহিত হয়েছে নবুওয়াতের পূর্বে। আর অবশিষ্ট তেইশটি বছর অতিবাহিত হয়েছে নবী ও রাসূল হিসেবে।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নগরী মদীনায় তাঁকে দাফন করা হয়। একটি সাদা খচ্চর ব্যতীত, যেটা তিনি বাহন হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর একটি ভূমি, যা তিনি মুসাফিরের জন্য সদকা (ওয়াকফ) করে দিয়েছিলেন, এ ব্যতীত তিনি কোনো সম্পদ বা উত্তরাধিকার রেখে যাননি।।[৪]
ইসলাম গ্রহণকারী, তাঁকে সত্যায়নকারী ও তাঁর অনুসরণকারীদের সংখ্যা অনেক বেশী। তার সাথে তার এক লক্ষাধিক সাহাবী বিদায় হজ্জে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যা সংঘটিত হয়েছিল তার মৃত্যুর আনুমানিক তিন মাস পূর্বে। হয়তো এটাই তার দীন সংরক্ষিত থাকা ও তা প্রসার লাভ করার অন্যতম একটি রহস্য। তার যেসকল সাহাবীকে তিনি ইসলামী মূল্যবোধের উপরে এবং ইসলামী মৌলিক নীতিমালার ভিত্তিতে দীক্ষিত করেছিলেন, তারা ছিলেন ন্যায়পরায়ণ, একাগ্রতা, ধার্মিক, অঙ্গীকার পূর্ণকারী এবং তারা যে দীনের উপরে ঈমান এনেছে সে মহান দীনের জন্য ত্যাগ স্বীকারকারী।
আর সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমের মাঝে ঈমান, 'ইলম, আমল, ইখলাছ, সত্যায়ন, ত্যাগ-বিসর্জন, বীরত্ব ও দানশীলতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে মহান ছিলেন: আবু বাকর আস-সিদ্দীক, 'উমার ইবনুল খাত্তাব, 'উসমান ইবন 'আফফান, 'আলী ইবন আবী তালিব রদিয়াল্লাহু আনহুম। তারাই ছিলেন প্রথম সারির ঈমানদার ও সত্যায়নকারী। তারাই তার পরবর্তীতে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। যারা দীনের পতাকা বুলন্দ করেছিলেন। তাদের মধ্যে নবুওয়াতের কোনো বৈশিষ্ট্য যেমন ছিল না, ঠিক অন্যান্য সাহাবীদেরকে রাদিয়াল্লাহু আনহুম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র তাদেরকেও বিশেষায়িত করা হয়নি।
আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রতি প্রেরিত কিতাব, সুন্নাহ, তাঁর সীরাত, তাঁর কথা ও কর্মসমূহকে তাঁরই কথা বলার ভাষায় সংরক্ষিত করেছেন। পুরো ইতিহাস জুড়ে এমন কোনো ব্যক্তিত্ব পাওয়া যাবে না, যার জীবনবৃত্তান্ত রাসূলের সীরাতের ন্যায় এতো বিশদভাবে বিস্তারিতভাবে সংরক্ষিত হয়েছে। বরং তিনি কীভাবে ঘুমাতেন, কীভাবে পানাহার করতেন এবং কীভাবে হাঁসতেন এটাও সংরক্ষিত হয়েছে।ঘরের ভেতরে পরিবারের সদস্যদের সাথে কেমন আচরণ করতেন?তাঁর সীরাতের প্রতিটি তথ্য তাঁর জীবনবৃত্তান্তে সংরক্ষিত ও সংকলিত আছে। তিনি ছিলেন একজন মানুষ ও রাসূল। তাঁর মাঝে রব হওয়ার কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। তিনি নিজেরও কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারেন না।
পৃথিবীর সর্বস্তরে শিরক, কুফর ও মুর্খতা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হলে আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রিসালাতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। ভূ-পৃষ্ঠে আল্লাহ তা'আলার সাথে শিরক (অংশীদার সাব্যস্ত) না করে শুধুমাত্র তার ইবাদাত করে এমন কোনো ব্যক্তি তখন ছিল না। তবে আহলুল কিতাবের হাতেগোনা কিছু সংখ্যক লোক এর ব্যতিক্রম ছিল। এরপরে আল্লাহ তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সকল নবী ও রাসূলগণের শেষ নবী হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। আল্লাহ তা'আলা তাকে হিদায়াত ও সত্য দীন সহকারে গোটা পৃথিবীর অধিবাসীদের জন্য প্রেরণ করলেন; স্বীয় দীনকে অন্য সকল দীনের উপরে বিজয় দান করা এবং মানুষকে প্রতিমাপূজা, কুফর ও জুলুমের অন্ধকার থেকে বের করে তাওহীদ ও ঈমানের আলোর পথে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে। আর তাঁর রিসালাত পূর্ববর্তী সকল নবী আলাইহিমুস সালামের রিসালাতের সম্পূরক বলে বিবেচিত হবে।
নূহ, ইবরাহীম, মূসা, সুলায়মান, দাঊদ ও ঈসা আলাইহিমুস সালামসহ অন্যান্য সকল নবী ও রাসূলগণ যে পথের দিকে আহ্বান করেছেন, তিনিও সে পথের দিকেই আহ্বান করেছেন। অর্থাৎ এ মর্মে ঈমান আনায়ন করা যে, রব হলেন একমাত্র আল্লাহ, যিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবন্তকারী, মৃত্যুদানকারী, রাজাধিরাজ, যিনি সকল বিষয়াদি পরিচালনা করেন, যিনি হলেন অতিশয় স্নেহশীল ও করুণাময়, এবং বিশ্বে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল বস্তুর একক স্রষ্টা হলেন আল্লাহ তা'আলা। আল্লাহ ব্যতীত যা কিছু আছে তা সব কিছুই তাঁর সৃষ্টি।
অনুরূপভাবে তিনি আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল বস্তুকে পরিহার করে একমাত্র আল্লাহর 'ইবাদতের দিকে আহ্বান করেছেন। চূড়ান্তভাবে এই ব্যাখ্যাও প্রদান করেছেন যে, ইবাদতের ক্ষেত্রে অথবা তাঁর মালিকানার ক্ষেত্রে অথবা তাঁর সৃষ্টির ক্ষেত্রে অথবা তাঁর পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলা হলেন একক। তিনি এটাও বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কোনো সন্তান জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। তাঁর কোনো সমকক্ষ বা সমজাতীয় সত্তা নেই। তিনি তাঁর কোনো সৃষ্টির মাঝে বিলীন হন না। কোনো সৃষ্টির শারীরিক রূপও তিনি ধারণ করেন না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীম ও মূসা আলাইহিমাস সালাম এর সহীফাসমূহ, তাওরাত, যাবূর ও ইনজিলের ন্যায় আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনার দা'ওয়াত দেন; যেভাবে তিনি সকল রাসূল আলাইহিমুস সালাম এর প্রতি ঈমান আনার দা'ওয়াত দেন। যদি কোনো ব্যক্তি একজন নবীকেও অস্বীকার করে, তাহলে সে সকল নবীগণকে অস্বীকার করল মর্মে ঘোষণা দেন।
তিনি সকল মানুষকে আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে সুসংবাদ প্রদান করেন এবং আরো এ সুসংবাদ প্রদান করেন যে, আল্লাহই হলেন একমাত্র মহান সত্তা, যিনি দুনিয়ায় তাদের দায়ভার গ্রহণ করতে পারেন, আল্লাহই হলেন একমাত্র দয়ালু রব, অচিরেই তিনি এককভাবে কিয়ামতের দিবসে সমস্ত সৃষ্টির হিসাব নিবেন, যখন সকলকে তিনি তাদের কবর থেকে উঠাবেন। আর তিনিই হলেন সেই সত্তা যিনি মুসলিমদেরকে তাদের নেক আমলের প্রতিদান দশগুণ দান করেন। আর গুনাহের কাজে সমপরিমাণ শাস্তি দিবেন। তাদের জন্য রয়েছে পরকালে স্থায়ী নেয়ামত। আর যে ব্যক্তি কুফর করে এবং গুনাহের কর্মে লিপ্ত হয়, সে নিজ কর্মের প্রতিদান দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে ভোগ করবে।
আর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব পালনের কোনো পর্যায়ে স্বীয় গোত্র, নগর এবং নিজের মহান সত্তাকে মহৎ সাব্যস্ত করার প্রচেষ্টা করেননি। বরং কুরআনুল কারীমে নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও 'ঈসা আলাইহিমুস সালামের নামসমূহ তাঁর নামের চেয়ে বেশী পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। এমনিভাবে তাঁর মাতার নাম, তাঁর স্ত্রীগণের নামও কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করা হয়নি। বরং কুরআনে 'মূসার মাতা' এই শব্দটি একাধিকবার এসেছে। আর মারইয়াম আলাইহাস সালামের নাম পঁয়ত্রিশ বার উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল ত্রুটি থেকে মুক্ত, যা শরী'আত, মানবিক বুদ্ধি ও প্রাকৃতিক নিয়ম বিরোধী অথবা উত্তম চরিত্র যাকে নাকচ করে। কারণ নবীগণ – আলাইহিমুস সালাম – আল্লাহর নিকট থেকে আগত দীনের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত। আর যেহেতু তারা আল্লাহর আদেশসমূহ তাঁর বান্দাদের নিকট পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে আদিষ্ট ছিলেন। আর নবীগণের মাঝে কোনো প্রকার রব অথবা মাবূদ হওয়ার বৈশিষ্ট্য নেই। বরং তারা হলেন অন্য সকল মানুষের মতই মানুষ; যাদের নিকট আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বার্তাসমূহ অহী হিসেবে প্রেরণ করতেন।
রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাত যে আল্লাহর পক্ষ থেকে অহীর মাধ্যমে নাযিল করা হয়েছে এই বিষয়ে একটি অন্যতম বড় প্রমাণ হল, তার রিসালাত আজ অবধি অক্ষত অবস্থায় অবশিষ্ট রয়েছে, ঠিক যেমনটি তাঁর জীবদ্দশায় ছিল। আর এ রিসালাতের অনুসারীর সংখ্যা এক বিলিয়নেরও বেশী। যারা কোনো প্রকার পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধন না করেই উক্ত রিসালাতের আইনী ফরয কর্মগুলোকে বাস্তবায়িত করে থাকে, যেমন: সালাত, যাকাত, সিয়াম ও হজ্জ ইত্যাদি।
আল্লাহ তা'আলা নবীগণকে তাদের নবুওয়াতকে সাব্যস্তকারী প্রমাণসমূহ দ্বারা সাহায্য করেন, তাদের রিসালাতকে সাব্যস্তকারী সুস্পষ্ট প্রমাণ ও দলীলসমূহ কায়েম করেন। আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক নবীকেই এমন কিছু নিদর্শন দান করেছেন, যা একজন মুমিনের ঈমান আনার জন্য যথেষ্ট হয়। নবীগণকে প্রদানকৃত নিদর্শনাবলীর মাঝে সবচেয়ে মহান নিদর্শন হল আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিদর্শনাবলী। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা তাকে কুরআনুল কারীম দান করেছেন। যা নবীগণের নিদর্শনাবলীর মাঝে কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত স্থায়ী অন্যতম একটি নিদর্শন। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা'আলা তাকে মহান নিদর্শনাবলী (মু'জিযাহসমূহ) দ্বারা সাহায্য করেছেন। রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেকগুলো নিদর্শন আছে। সেগুলোর মাঝে অন্যতম হল:
ইসরা ও মি'রাজ, চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া, একাধিকবার মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ার পরে মানুষকে পানি পান করানোর জন্য দু'আ করার পরে বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া।
খাবার ও পানির পরিমাণ অল্প থেকে বৃদ্ধি করে দেওয়া, যাতে সেখান থেকে অনেক মানুষ পানাহার করতে পারে।
আল্লাহর পক্ষ থেকে অবহিত হয়ে অতীতের অদৃশ্য ঘটনামূহের ব্যাপারে তার সংবাদ দেওয়া, যেগুলোর বিস্তারিত তথ্য কেউ জানত না, যেমন: তাকে পূর্ববর্তী বিভিন্ন নবীগণের –আলাইহিমুস সালাম– সাথে তাদের কওমের ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর বর্ণনা করা এবং 'আসহাবুল কাহাফ' এর ঘটনার বিবরণ প্রদান করা।
আল্লাহর পক্ষ থেকে অবহিত হয়ে ভবিষ্যতে আগত ঘটনাসমূহের ব্যাপারে তার সংবাদ প্রদান করা, যেগুলো পরবর্তীতে সংঘটিত হয়েছে, যেমন: হিজাযের ভূমি থেকে নির্গত আগুনের সংবাদ দেওয়া, যে আগুন সিরিয়াতে অবস্থানকারী মানুষেরা দেখেছিল এবং দালান-অট্টালিকা নির্মাণে মানুষের একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া।
তাঁর জন্য আল্লাহ যথেষ্ট হওয়া এবং তাঁকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের হাত থেকে রক্ষা করা ও নিরাপদে রাখা।
তাঁর সাহাবীগণের সাথে তার পক্ষ থেকে কৃত অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হওয়া, যেমন: তাদেরকে সম্বোধন করে তার উচ্চারিত এই বাণীটি:"অবশ্যই পারস্য ও রোমকে তোমাদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। আর তোমরা উভয় সম্রাজ্যের ধনভাণ্ডারগুলো আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে।"
আল্লাহর পক্ষ থেকে ফিরিশতাদের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করা।
নবীগণের –আলাইহিমুস সালাম– পক্ষ থেকে তাদের জাতিকে রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের ব্যাপারে সুসংবাদ প্রদান করা। যারা তার ব্যাপারে সুসংবাদ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন: মূসা, দাউদ, সুলায়মান ও 'ঈসা আলাইহিমুস সালাম সহ বনী ইসরাঈলের আরো অন্যান্য নবীগণ।
সুস্থ বিবেক স্বীকার করে নেয় এমন যৌক্তিক দলীলাদি ও পেশকৃত দৃষ্টান্তসমূহ [৫] দ্বারা তাকে সাহায্য করেছেন।
এসব নিদর্শনাবলী, দলীলসমূহ ও বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টান্তসমূহ কুরআনে ও সুন্নাহের মাঝে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। কুরআনের নিদর্শনসমূহ অগণিত। যে ব্যক্তি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হতে চায়, সে যেন কুরআনুল কারীম, সুন্নাহ ও সীরাত অধ্যায়ন করে। তাতে এই নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে নিশ্চিত সংবাদ বিদ্যমান আছে।
এ মহান নিদর্শনগুলো যদি সংঘটিত না হত, তাহলে তার প্রতিপক্ষ অর্থাৎ কুরাইশ গোত্রের কাফের, আরব উপদ্বীপে বসবাসকারী ইহুদী ও খৃস্টানদের জন্য তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা এবং তার নিকট থেকে মানুষকে দূরে রাখা সহজ হয়ে যেত।
কুরআনুল কারীম এমন একটি গ্রন্থ, যা আল্লাহ তা'আলা রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অহীর মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন। এটা রাব্বুল 'আলামীন আল্লাহর পবিত্র কালাম। আল্লাহ তা'আলা জিন ও মানব জাতিকে এ মর্মে চ্যালেঞ্জ করেছেন যে, তারা যদি পারে তাহলে তারা যেন এমন একটি কুরআন অথবা কুরআনের ন্যায় একটি সূরা রচনা করে। চ্যালেঞ্জটি আজও পর্যন্ত বহাল আছে। কুরআনুল কারীম এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, যেগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষকে হয়রান করে দেয়। আর কুরআনুল কারীম আজ অবধি তার নাযিল হওয়া ভাষায় তথা আরবীতে সংরক্ষিত আছে। যেখান থেকে একটি হরফও হ্রাস করা হয়নি। কিতাবটি লিপিবদ্ধ এবং প্রকাশিত। এটি একটি মহান অলৌকিক গ্রন্থ। মানব জাতির নিকট আগত সর্ব মহান গ্রন্থ। গ্রন্থটি পাঠের উপযুক্ত এবং একই সাথে গ্রন্থটির অর্থানুবাদও অধ্যয়নযোগ্য। যে ব্যক্তি এই গ্রন্থ অধ্যয়ন করা এবং এর প্রতি ঈমান আনার সুযোগ পেল না, সে সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল।এমনিভাবে রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ, তাঁর স্বভাব-রীতি, তার জীবন-চরিত বিশ্বস্ত বর্ণনাকারীগণের ধারাবাহিক সূত্রের মাধ্যমে সংরক্ষিত ও বর্ণিত হয়েছে। এসব রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ভাষায় কথা বলতেন তথা আরবী ভাষায় এমনভাবে লিপিবদ্ধ ও প্রকাশিত যেন তিনি আমাদের মাঝেই বসবাস করছেন। আর সেগুলো অনেক ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। আর কুরআনুল কারীম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ উভয়টি ইসলামের যাবতীয় বিধিবিধান ও আইন-কানুনের একমাত্র উৎস।
রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শরী'আত নিয়ে আগমন করেছেন, তা হল ইসলামী শরী'আত। যেটা সকল আসমানী ধর্মের শরী'আত ও ঐশী শরী'আতসমূহের জন্য সীলমোহর। এই শরী'আত মৌলিক দিক থেকে পূর্ববর্তী নবীদের শরী'আতসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদিও সেগুলোর ধরণ ভিন্ন ছিল।
এটি একটি পূর্ণতার শরী'আত। যা প্রত্যেক যুগ ও কালের উপযোগী। যেখানে রয়েছে মানুষের দীন ও দুনিয়ার কল্যাণ। যা সালাত ও যাকাতের ন্যায় সকল 'ইবাদতকে অন্তর্ভুক্ত করে, যেগুলো একনিষ্ঠরূপে সকল জাহানের রব আল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করতে বান্দাদের উপরে ফরয সাব্যস্ত করা হয়েছে। যা মানুষের আর্থিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সামরিক এবং বৈধ-অবৈধ পারিপার্শ্বিকতা সহ সকল প্রকারের লেনদেনকে তাদের জন্য বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে। মানুষের ইহকালীন জীবনযাত্রা ও পরকালীন জীবনে যেগুলোর গভীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আর এ শরী'আত মানুষের দীন, তাদের রক্ত (জীবন), তাদের ইজ্জত-আবরু, সম্পদ, চিন্তাধারা ও বংশধারাকে সুরক্ষিত রাখে। এ শরী'আত সকল শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী এবং সকল প্রকার অনৈতিক স্বভাব ও অনিষ্টতা থেকে সতর্ক করে। যা মানুষের সম্মান, মধ্যমপন্থা, ন্যায়পরায়ণতা, একনিষ্ঠতা, পরিচ্ছন্নতা, দক্ষতা, ভালোবাসা, মানুষের জন্য কল্যাণ পছন্দ করা, জান-মালের সংরক্ষণ, জন্মভূমির নিরাপত্তা, মানুষকে অসৎ পদ্ধতিতে আনন্দ দেওয়া বা ভীতি সঞ্চার করার নিষেধাজ্ঞার প্রতি আহ্বান করে। আর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সব ধরণের সীমালঙ্ঘন ও বিশৃংখলার বিরুদ্ধে আর কল্পকাহিনী, বিচ্ছিন্নবাদিতা ও বৈরাগ্যবাদের বিরুদ্ধে এক বীর সৈনিক।
রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা মানুষকে – নারী ও পুরুষদেরকে – সম্মানিত করেছেন এবং মানুষের সকল অধিকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন। আর তাকে তার সমস্ত স্বাধীন সিদ্ধান্ত, যাবতীয় কর্মকাণ্ড এবং সকল প্রকার কর্তৃত্বের দায়ভার তার উপরেই চাপিয়ে দিয়েছেন। এমন কোনো কাজ, যার ফলে তার নিজের অথবা অন্য কোনো মানুষের ক্ষতি হয়, এমন যে কোনো কাজের দায়ভার তার উপরেই বর্তানো হয়েছে। আর নারী-পুরুষকে ঈমান, দায়বদ্ধতা, শাস্তি, ও সাওয়াবের দিক থেকে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই শরী'আতে নারীর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে মাতা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, কন্যা ও বোন হিসেবে মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে।
আর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শরী'আত নিয়ে এসেছেন, তা মূলত মানবীয় বুদ্ধিকে সংরক্ষণ করে ও মদপানের ন্যায় মানবীয় বিবেককে ধ্বংসকারী এমন যে কোনো বিষয়ের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সুতরাং ইসলাম মনে করে যে, দীন হল এমন একটি আলোক শক্তি, যা বিবেককে তার প্রকৃত পথ প্রদর্শন করে; যাতে করে মানুষ স্বীয় রবের 'ইবাদাত করতে পারে বিচক্ষণতা ও জ্ঞানের আলোকে। ইসলামী শরী'আহ বিবেকের মর্যাদাকে আরো উন্নীত করে বিবেককে দায়িত্ব অর্পণের মাপকাঠি বানিয়েছে। অপরদিকে বিবেককে কুসংস্কার ও প্রতিমাপূজার শৃঙ্খলা থেকে মুক্তি দান করেছেন।
ইসলামী শরী'আত সঠিক জ্ঞানকে পূর্ণ মর্যাদা দেয় এবং প্রবৃত্তি থেকে মুক্ত 'ইলমী গবেষণার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। নিজের মাঝে এবং মহাবিশ্বের মাঝে আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে গবেষণা ও চিন্তাভাবনার পথ দেখায়। আর জ্ঞানের সঠিক তথ্যগত গবেষণালব্ধ ফলাফল কখনো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত শরী'আতের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না।
শরী'আতে নির্দিষ্ট কোনো জাতের মানুষদেরকে অপর জাতের মানুষদের চেয়ে বেশী মর্যাদা প্রদান করার কোনো পৃথক আইন নেই। এখানে কোনো জাতিকে অপর জাতির উপরে শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলে না। বরং সকলেই শরী'আতের বিধানের সামনে সমান। যেহেতু সকল মানুষই মূল শেকড়ে একই সুতোয় গাঁথা। কোনো জাতের মানুষের উপরে অন্য জাতের মানুষের এবং কোনো বংশের উপরে অন্য বংশের শ্রেষ্ঠত্ব একমাত্র তাকওয়ার দ্বারাই নির্ধারিত হবে। রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন যে, প্রত্যেক সন্তান জন্মগতভাবে ফিতরাত তথা প্রাকৃতিকভাবে (তাওহীদী) স্বভাবের অধিকারী হয়ে থাকে। কোনো মানুষ জন্মগতভাবে ভুলকারী অথবা অন্যের ভুলের ওয়ারিস হয় না।
ইসলামী শরী'আতে আল্লাহ তা'আলা তাওবাকে বিধিসম্মত করেছেন। তাওবা হল: গুনাহ পরিত্যাগ করে স্বীয় রবের দিকে মানুষের ফিরে আসা। আর তাওবা পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয়। সুতরাং মানুষের ভুলত্রুটি লোক সম্মুখে স্বীকার করার কোনো প্রয়োজন নেই। সুতরাং ইসলামে মানুষের মাঝে এবং আল্লাহর মাঝে সম্পর্ক হবে সরাসরি। এক্ষেত্রে তোমার মাঝে আর আল্লাহর মাঝে কোনো মাধ্যম প্রয়োজন নেই। সুতরাং ইসলাম আমাদেরকে কোনো মানুষকে কর্মসমূহ ও যাবতিয় ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অংশীদার নির্ধারণে বাধা দেয়।
যে শারী'আত রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে আগমন করেছেন, তা পূর্ববর্তী সকল শরী'আতকে রহিত করে দেয়। যেহেতু ইসলামী শরী'আত –যা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম– আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন, তা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত সর্বশেষ শরী'আত। যা সমস্ত জগতবাসীর জন্য প্রেরিত; এ জন্যে তা পূর্ববর্তী সকল শরী'আতকে রহিত করে দিয়েছে। যেভাবে পূর্ববর্তী শরী'আতগুলোও একটি অপরটিকে রহিত করে দিয়েছিল। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ইসলামী শরী'আত ব্যতীত অন্য কোনো শরী'আত গ্রহণ করবেন না। এবং রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ইসলাম নিয়ে এসেছেন তা ব্যতীত অন্য কোনো দীন তিনি গ্রহণ করবেন না। যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মকে দীন হিসেবে গ্রহণ করবে, তার উক্ত ধর্ম গ্রহণযোগ্য হবে না। যে এ শরী'আতের যাবতীয় বিধান বিস্তারিতরূপে জানার ইচ্ছা রাখে, সে যেন বিধানগুলো নির্ভরযোগ্য এমন গ্রন্থগুলোতে অনুসন্ধান করে, যেগুলো ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ অবহিত করে।
ইসলামি শরী'আতের মূল লক্ষ্য হল – যেমনটি সকল ইলাহী রিসালাতের মূল লক্ষ্য -: প্রকৃত দীন বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষকে উচ্চস্তরে উন্নীত করা; ফলশ্রুতিতে মানুষ হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একনিষ্ঠ অনুরক্ত বান্দা এবং তাকে মানুষ, বস্তুগত বিষয় অথবা যে কোনো ধরণের কুসংষ্কারের দাসত্ব থেকে মুক্ত করা।
ইসলামী শরী'আত প্রত্যেক স্থান ও কালের জন্যই উপযুক্ত। এ শরী'আতে মানব জাতির উপযুক্ত কল্যাণের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো বিধান নেই। কারণ তা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই নাযিলকৃত, যিনি মানুষের প্রয়োজন সম্পর্কে ভালো জানেন। আর মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবেই একটি সঠিক সংবিধানের মুখাপেক্ষী, যে সংবিধানের একটি নীতি অপরটির সাথে সাংঘর্ষিক হবে না, যা মানবতার সংস্কারক হবে এবং সেটি কোনো মানুষের মধ্য থেকে কেউ এটি তৈরী করবে না। বরং এটা হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত, যা মানুষকে কল্যাণ ও ন্যায়ের পথ দেখাবে। যখন তারা তাদের সমস্যাগুলোকে উক্ত সংবিধানের আইনের কাছে সমর্পণ করবে, তখন তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে। আর তারা একে অন্যের অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ করবে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে,প্রত্যেক নবীর বেশ কিছু শ্ত্রু ছিল,যারা তার সাথে শত্রুতা পোষণ করত এবং তাঁর দা'ওয়াতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াত। যারা তার প্রতি মানুষের ঈমান আনার পথে বাধা প্রদান করত। তাই আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় ও তার মৃত্যুর পরে তাঁরও অনেক শত্রু ছিল। আল্লাহ তা'আলা তাদের সকলের বিরুদ্ধে তাকে বিজয় দান করেছেন।তাদের [শত্রুদের] মধ্যে থেকেই বহুসংখ্যক ব্যক্তির পক্ষ থেকে"তিনি একজন নবী" মর্মে সাক্ষ্য – অতীতে ও বর্তমানে – বর্ণিত হয়েছে।এই বিষয়েও কোনো সন্দেহ নেই যে, তিনি পূর্ববর্তী নবীগণ – আলাইহিমুস সালাম– এর ন্যায় একই বিধান নিয়ে এসেছেন।আর তারা এটাও জানে যে,তিনি সত্যের উপরে আছেন। কিন্তু তারা বিভিন্ন ধরণের বিপত্তির মুখে ঈমান আনায়নের পথে বাধা প্রাপ্ত হয়েছে, যেমন: ক্ষমতার লোভ অথবা সামাজিক ভয়, অথবা পদে বহাল থেকে যে সম্পদ বা সম্মান অর্জন করা হয়,তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে।
সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই প্ৰাপ্য।
লেখকঃডক্টর মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহে আস সুহাইম
আকীদা বিষয়ক সাবেক অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।
শিক্ষা অনুষদ, কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়।
রিয়াদ, রাজকীয় সৌদি আরব
ইসলামের রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
১। তাঁর নাম, বংশ ও যে শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন
২। সম্ভ্রান্ত ও বরকতময় নারীর সঙ্গে শুভবিবাহ
৫। তাঁর নবুওয়াতের নিদর্শন, চিহ্ন ও প্রমাণসমূহ
৬। রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত শরী'আত