الوصف
مقالة باللغة البنغالية، تتحدث عن تعريف الشرك، وأنواعه، وعن الفروق بين الشرك الأكبر والأصغر.
ترجمات أخرى 2
الشرك وأنواعه
শির্ক একটি মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ তা'আলা শির্কের গোনাহ কখনও ক্ষমা করবেন না। এ ছাড়া যত গোনাহ আছে ইচ্ছা করলে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। এ প্রবন্ধে শির্কের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
শির্কের সংজ্ঞা: রব ও ইলাহ হিসেবে আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক সাব্যস্ত করার নামই শির্ক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়্যাত তথা ইলাহ হিসেবে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়। যেমন, আল্লাহর সাথে অন্য কারো নিকট দো'আ করা কিংবা বিভিন্ন প্রকার ইবাদাত যেমন যবেহ, মান্নত, ভয়, আশা, মহব্বত ইত্যাদির কোনো কিছু গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা।
১. এতে 'ইলাহ'-এর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে খালেক তথা সৃষ্টিকর্তার সাথে মাখলুক তথা সৃষ্ট বস্তুর তুলনা করা হয়। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করলো, সে প্রকারান্তরে তাকে আল্লাহর অনুরূপ ও সমকক্ষ বলে স্থির করলো। আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّ ٱلشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِيمٞ ١٣﴾ [لقمان: ١٣]
“নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।" [সূরা লোকমান, আয়াত: ১৩]
যুলুম বলা হয় কোনো বস্তুকে তার আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখা। সুতরাং যে গায়রুল্লাহর ইবাদত করে, সে মূলতঃ ইবাদতকে তার আসল স্থানে না রেখে ইবাদত পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন কারো উদ্দেশ্যে তা নিবেদন করে। আর এটা হলো সবচেয়ে বড় যুলুম এবং অন্যায়।
২. আল্লাহ তা'আলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন, শির্ক করার পর যে ব্যক্তি তা থেকে তাওবা করবে না, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ﴾ [النساء: ٤٨]
“নিশ্চয় আল্লাহর তাঁর সাথে শরীক করার পাপ ক্ষমা করেন না। এতদ্ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।" [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
৩. আল্লাহ এও বলেন যে, তিনি মুশরীকদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। তিনি বলেন,
﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [المائدة: ٧٢]
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।" [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৭২]
৪. শির্ক সকল আমলকে নষ্ট ও নিষ্ফল করে দেয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٨٨﴾ [الانعام: ٨٨]
“যদি তারা শির্ক করত, তবে তাদের কাজকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত।" [সূরা আল-আন'আম, আয়াত: ৮৮]
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,
﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [الزمر: ٦٥].
“আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি অহী প্রেরণ করা হয়েছে যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন।" [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৫]
৫. মুশরিক ব্যক্তির রক্ত (তথা প্রাণ সংহার) ও ধন-সম্পদ কেড়ে নেওয়া উভয়ই হালাল। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ﴾ [التوبة: ٥]
“অতঃপর মুশরিকদেরকে হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদেরকে বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক।" [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَإِذَا قَالُوا: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا بِحَقِّهَا »
“আল্লাহ ছাড়া আর কোনো হক মা'বুদ নেই, একথা বলা পর্যন্ত লোকজনের সাথে লড়ে যাওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে। অতঃপর যখনই তারা এই বাণী উচ্চরণ করল, আমার হাত থেকে তাদের জান-মাল তারা রক্ষা করে নিল। অবশ্য এ বাণীর দাবী অনুযায়ীকৃত দন্ডনীয় অপরাধের সাজা পেতেই হবে"।[1]
৬. কবীরা গোনাহসমূহের মধ্যে শির্ক সবচেয়ে বড় গোনাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الكَبَائِرِ؟» ثَلاَثًا، قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «الإِشْرَاكُ بِاللَّهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ»
“আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? তারা বলল- জ্বী, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শির্ক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া"।[2]
ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, সমস্ত জগতের সৃষ্টি এবং এর ওপর কর্তৃত্বের উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহ তা'আলাকে যেন তার নাম ও গুণাবলিসহ জানা যায় ও শুধু তাঁরই ইবাদত করা হয়। তাঁর সাথে আর কারো শরীক করা না হয়। আর মানুষ যেন নিজেদের মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করে। ন্যায় ও ইনসাফ হলো সেই নিক্তি যদ্বারা আসমান ও জমীন প্রতিষ্ঠত। যেমন, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا رُسُلَنَا بِٱلۡبَيِّنَٰتِ وَأَنزَلۡنَا مَعَهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡمِيزَانَ لِيَقُومَ ٱلنَّاسُ بِٱلۡقِسۡطِۖ﴾ [الحديد: ٢٥]
“নিশ্চয় আমরা আমার রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে।" [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২৫]
এখানে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছিন যে, তিনি তাঁর রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন এবং স্বীয় গ্রন্থসমূহ নাযিল করেছেন, যাতে মানুষ 'ক্বিসত' তথা ইনসাফ হচ্ছে তাওহীদ, বরং তাওহীদ হচ্ছে 'আদল ও ইনসাফের মূল স্তম্ভ। পক্ষান্তরে শির্ক হলো স্পষ্ট যুলুম ও অন্যায়। যেমন, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِيمٞ ١٣﴾ [لقمان: ١٣]
“নিশ্চয়ই শির্ক একটি বড় যুলুম।" [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৩]
অতএব, শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় যুলুম এবং তাওহীদ হচ্ছে সর্বোত্তম 'আদল ও ইনসাফ। আর যা বিশ্ব সৃষ্টির এই উদ্দেশ্যের সবচেয়ে বেশি পরিপন্থী, তাই সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ। এ ব্যাপারে ইবনুল কাইয়েম আরো বলেন, যখন শির্কই হলো এ উদ্দেশ্যের পরিপন্থী, তাই সর্বতোভাবে এটিই সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ। আল্লাহ প্রত্যেক মুশরিকের ওপর জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তার জান-মাল ও পরিবার-পরিজনকে তাওহীদপন্থীদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। তদুপরি তাদেরকে দাস হিসেবে গ্রহণ করার ও অনুমতি দিয়েছেন, কেননা তারা আল্লাহর ইবাদত ও দাসত্বের কাজ আদায় করা থেকে বিরত থেকেছে। আল্লাহ মুশরিক ব্যক্তির কোনো কাজ কবুল করতে, আখিরাতে তার ব্যাপারে কোনো সুপারিশ গ্রহণ করতে ও তার কোনো দো'আ কবুল করতে এবং তার কোনো আশা বাস্তবায়ন করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মুশরিক ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে সবচেয়ে অজ্ঞ। কেননা সে সৃষ্টির কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে। অথচ এ হলো চূড়ান্ত অজ্ঞতা এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের যুলুম। যদিও বস্তবিকভাবে মুশরিক ব্যক্তি তার রব আল্লাহ তা'আলার ওপর যুলুম করে না, বরং সে নিজের ওপরই যুলুম করে থাকে।
৭. শির্ক হলো এমন ত্রুটি ও দোষ যা থেকে আল্লাহ তা'আলা নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করলো, সে আল্লাহর জন্য ওটাই সাব্যস্ত করলো যা থেকে তিনি নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর তাই শির্ক হলো আল্লাহর পরিপূর্ণ নাফরমানী, চূড়ান্ত হঠকারিতা ও তাঁকে কষ্ট দেওয়ারই নামান্তর।
১. শির্কে আকরার (বড় শির্ক): যা বান্দাকে মিল্লাতের গণ্ডী থেকে বের করে দেয়। এ ধরনের শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি যদি শির্কের ওপরই মারা যায় এবং তা থেকে তাওবা না করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে।
শির্কে আকবর হলো গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া যে কোনো ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত আদায় করা, গায়রুল্লাহ'র উদ্দেশে কুরবানী করা, মান্নত করা, কোনো মৃত ব্যক্তি কিংবা জ্বিন অথবা শয়তান কারো ক্ষতি করতে পারে কিংবা কাউকে অসুস্থ করতে পারে, এ ধরনের ভয় পাওয়া, প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখে না সেসব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আশা করা।
আজকাল আওলিয়া ও বুযুর্গানে দীনের কবরসমূহকে কেন্দ্র করে এ ধরনের শির্কের প্রচুর চর্চা হচ্ছে। এদিকে ইশারা করে আল্লাহ বলেন,
﴿وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنفَعُهُمۡ وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ﴾ [يونس: ١٨]
“তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোনো উপকার। আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।" [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১৮]
২. শির্কে আসগার (ছোট শির্ক): শির্ক আসগার বান্দাকে মুসলিম মিল্লাতের গণ্ডী থেকে বের করে দেয় না, তবে তার একত্ববাদের আকীদায় ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে। এটি শির্কে আকবারে লিপ্ত হওয়ার অসীলা ও কারণ। এ ধরনের শির্ক দু'প্রকার:
এ প্রকারের শির্ক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
আল্লাহর ব্যতীত অন্য কিছুর কসম ও শপথ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ أَشْرَكَ»
“যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহ'র কসম করল, সে কুফুরী কিংবা শির্ক করল"।[3]
অনুরূপভাবে এমন কথা বলা যে, আল্লাহ এবং তুমি যেমন চেয়েছ مَا شَاءَ اللهُ وَشِئْتَ কোনো এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে “আল্লাহ এবং আপনি যেমন চেয়েছেন" কথাটি বললে তিনি বললেন,
«جَعَلْتَنِي لِلَّهِ عَدْلًا، بَلْ مَا شَاءَ اللَّهُ وَحْدَهُ»
''তুমি কি আমাকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ স্থির করলে? বরং বল, আল্লাহ এককভাবে যা চেয়েছেন"।[4]
আর একথাও বলা যে, যদি আল্লাহ ও অমুক ব্যক্তি না থাকত لَوْلاَ اللهُ وَفُلاَنٌ উপরোক্ত ক্ষেত্রদ্বয়ে বিশুদ্ধ হলো নিম্নরূপে বলা- আল্লাহ চেয়েছেন, অতঃপর অমুক যেমন চেয়েছে مَاشَاءَ اللهُ ثُمَّ فُلاَنٌ যদি আল্লাহ না থাকতেন, অতঃপর অমুক ব্যক্তি না থাকত لَوْلاَ اللهُ ثُمَّ فُلاَنٌ কেননা আরবীতে ثُمَّ (যার অর্থ: তারপর বা অতঃপর) অব্যয়টি বিলম্বে পর্যায়ক্রমিক অর্থের জন্য ব্যবহৃত হয়। তাই 'এবং' শব্দের বদলে 'তারপর' কিংবা 'অতঃপর' শব্দের ব্যবহার বান্দার ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার অধীনস্ত করে দেয়। যেমন, আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩﴾ [التكوير: ٢٩]
“তোমরা বিশ্বজগতের রব আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুরই ইচ্ছা করতে পার না।" [সূরা আত-তাকবীর, আয়াত: ২৯]
পক্ষান্তরে আরবী واو যার অর্থ 'এবং' অব্যয়টি দু'টি সত্তা বা বস্তুকে একত্রীকরণ ও উভয়ের অংশীদারিত্ব অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর দ্বারা পর্যায়ক্রমিক অর্থ কিংবা পরবর্তী পর্যায়ে সংঘটিত অর্থ বুঝা যায় না। যেমন, একথা বলা যে, 'আমার জন্য তো কেবল তুমি এবং আল্লাহ আছ' ও 'এতো আল্লাহ এবং তোমার বরকতে হয়েছে'।
যেমন বিপদাপদ দূর করার জন্য কড়ি কিংবা দাগা বাঁধা, বদনজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীজ ইত্যাদি লটকানো। এসব ব্যাপারে যদি এ বিশ্বাস থাকে যে, এগুলো বালা-মুসীবত দূর করার মাধ্যম ও উপকরণ, তাহলে তা হবে শির্কে আসগার। কেননা, আল্লাহ এগুলোকে সে উপকরণ হিসেবে সৃষ্টি করেন নি; পক্ষান্তরে কারো যদি এ বিশ্বাস হয় যে, এসব বস্তু স্বয়ং বালা-মুসীবত দূর করে, তবে তা হবে শির্ক আকবর। কেননা এতে গায়রুল্লাহ'র প্রতি সেই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।
এ প্রকার শির্কের স্থান হলো ইচ্ছা, সংকল্প ও নিয়তের মধ্যে। যেমন, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রসিদ্ধি অর্জনের জন্য কোনো আমল করা। অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এমন কোনো কাজ করে তা দ্বারা মানুষের প্রশংসা লাভের ইচ্ছা করা। যেমন, সুন্দরভাবে সালাত আদায় করা কিংবা সদকা করা এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তার প্রশংসা করবে, অথবা সশব্দে যিকির-আযকার পড়া ও সুকণ্ঠে তিলাওয়াত করা যাতে তা শুনে লোকজন তার গুণগান করে। যদি কোনো আমলে রিয়া তথা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে আল্লাহ তা'আলা তা বাতিল করে দেন। আল্লাহ বলেন,
﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [الكهف: ١١٠]
“অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেনো সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।" [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১১০]
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ قَالُوا: وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: الرِّيَاءُ»
“তোমাদের ওপর আমি যে জিনিসের ভয় সবচেয়ে বেশি করছি তা হলো শির্কে আসগর। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! শির্কে আসগর কী? তিনি বললেন: রিয়া (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা)"।[5]
পার্থিব লোভে পড়ে কোনো আমল করাও এ প্রকার শির্কের অন্তর্গত। যেমন, কোনো ব্যক্তি শুধু মাল-সম্পদ অর্জনের জন্যেই হজ করে, আযান দেয় অথবা লোকদের ইমামতি করে কিংবা শর'ঈ জ্ঞান অর্জন করে বা জিহাদ করে।
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ، وَعَبْدُ الدِّرْهَمِ، وَعَبْدُ الخَمِيصَةِ، إِنْ أُعْطِيَ رَضِيَ، وَإِنْ لَمْ يُعْطَ سَخِطَ»
“দীনার, দিরহাম এবং খামিসা-খামিলা (তথা উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ)-এর যারা দাস, তাদের ধ্বংস। তাকে দেওয়া হলে সে সন্তুষ্ট হয়, আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়"।[6]
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, সংকল্প ও নিয়তের শির্ক হলো এমন এক সাগর সদৃশ যার কোনো কূল-কিনারা নেই। খুব কম লোকই তা থেকে বাঁচতে পারে। অতএব, যে ব্যক্তি তার আমল দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কিছু ও গায়রুল্লার কাছে ঐ আমলের প্রতিদান প্রত্যাশা করে, সে মূলতঃ উক্ত আমল দ্বারা তার নিয়ত ও সংকল্প নিয়ত খালেসভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা। এটাই হলো সত্যপন্থা তথা ইবরাহীমের মিল্লাত, যা অনুসরণ করার জন্য মহান আল্লাহ তাঁর সকল বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এতদ্ব্যতীত তিনি কারো কাছ থেকে অন্য কিছু কবুল করবেন না। আর এ সত্য পন্থাই হলো ইসলামের হাকীকত।
﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥]
“কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনও কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত।" [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
উপরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বাবে বুঝা যাচ্ছে যে, শির্কে আকবার ও শির্কে আসগারের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। সেগুলো হলো:
১. কোনো ব্যক্তি শির্কে আকবারে লিপ্ত হলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যায়; পক্ষান্তরে শির্কে আসগারের ফলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয় না।
২. শির্কে আকবরে লিপ্ত ব্যক্তি চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে; পক্ষান্তরে শির্কে আসগারে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে গেলে চিরকাল সেখানে অবস্থান করবে না।
৩. শির্কে আকবার বান্দার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেয়, কিন্তু শির্কে আসগার সব আমল নষ্ট করে না; বরং রিয়া ও দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে কৃত আমল শুধু তৎসংশ্লিষ্ট আমলকেই নষ্ট করে।
৪. শির্কে আকবারে লিপ্ত ব্যক্তির জান-মাল মুসলিমদের জন্য হালাল; পক্ষান্তরে শির্কে আসগারে লিপ্ত ব্যক্তির জান-মাল কারো জন্য হালাল নয়।
সমাপ্ত
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৫৪, ৫৯৭২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭।
[3] সুনান আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৩২৫১।
[4] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৫৬১।
[5] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৩৬৩।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮৮৭