×
New!

Bayan Al Islam Encyclopedia Mobile Application

Get it now!

তাওয়াফ ও সাঈ‘র বিধান (বাংলা)

Hazırlıq: মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক

Description

এ প্রবন্ধে লিখক আল-কুরআন ও হাদীসের আলোকে তাওয়াফে ও সাঈ‘-এর সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, গুরুত্ব ও আহকাম সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।

Download Book

    তাওয়াফ ও সাঈ‘র বিধান

    أحكام الطواف والسعي

    < بنغالي- Bengal - বাঙালি>

    মুহাম্মাদ শামসুল হক সিদ্দিক

    محمد شمس الحق صديق

    —™

    সম্পাদক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

    مراجعة: د/ محمد منظور إلهي

    তাওয়াফ ও সাঈ‘র বিধান

    আল-হামদুলিল্লাহ ওয়াসসলাতু ওয়াসসালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ.....

    তাওয়াফের সংজ্ঞা

    কোনো কিছুর চারদিকে প্রদক্ষিণ করাকে শাব্দিক অর্থে তাওয়াফ বলে। হজের ক্ষেত্রে কা‘বা শরীফের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলে। পবিত্র কা‘বা ব্যতীত অন্য কোনো জায়গায় কোনো জিনিসকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করা হারাম।

    তাওয়াফের ফযীলত

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «مَنْ طَافَ بِالْبَيْتِ، وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، كَانَ كَعِتْقِ رَقَبَةٍ»

    “যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করল, ও দু’রাকাত সালাত আদায় করল, তার এ কাজ একটি গোলাম আযাদের সমতুল্য হল”[1]

    হাদীসে আরো এসেছে,

    «فَإِذَا طُفْتَ بِالْبَيْتِ، خَرَجْتَ مِنْ ذُنُوبِكَ كَيَوْمِ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ»

    “তুমি যখন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলে, পাপ থেকে এমনভাবে বের হয়ে গেলে যেমন, আজই তোমার মাতা তোমাকে জন্ম দিলেন”[2]

    তাওয়াফের প্রকারভেদ

    ১. তাওয়াফে কুদূম:

    এফরাদ হজকারী মক্কায় এসে প্রথম যে তাওয়াফ আদায় করে তাকে তাওয়াফে কুদুম বলে। কিরান হজকারী ও তামাত্তু হজকারী উমরার উদ্দেশ্যে যে তাওয়াফ করে থাকেন তা তাওয়াফে কুদুমেরও স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায়।

    তবে হানাফী মাজহাব অনুযায়ী কিরান হজকারীকে উমরার তাওয়াফের পর ভিন্নভাবে তাওয়াফে কুদূম আদায় করতে হয়। হানাফি মাজহাবে তামাত্তু ও শুধু উমরা পালনকারীর জন্য কোনো তাওয়াফে কুদুম নেই।

    কুদূম শব্দের অর্থ আগমণ। সে হিসেবে তাওয়াফে কুদূম কেবল বহিরাগত হাজীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মক্কায় বসবাসকারীরা যেহেতু অন্য কোথাও থেকে আগমন করে না, তাই তাদের জন্য তাওয়াফে কুদূম সুন্নত নয়।

    ২. তাওয়াফে এফাদা বা যিয়ারত:

    সকল হাজীকেই এ তাওয়াফটি আদায় করতে হয়। এটা হলো হজের ফরয তাওয়াফ যা বাদ পড়লে হজ সম্পন্ন হবে না। তাওয়াফে যিয়ারত আদায়ের আওয়াল ওয়াক্ত শুরু হয় ১০ তারিখ সুবহে সাদিক উদয়ের পর থেকে। জমহুর ফুকাহার নিকট ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে সম্পন্ন করা ভালো। এর পরে করলেও কোনো সমস্যা নেই। সাহেবাইন (ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ) এর নিকট তাওয়াফে এফেদা আদায়ের সময়সীমা উন্মুক্ত। ইমাম আবু হানিফা (র) এর নিকট তাওয়াফে যিয়ারত আদায়ের ওয়াজিব সময় হলো ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এ সময়ের পরে তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করলে ফরয আদায় করলে ফরয আদায় হয়ে যাবে তবে ওয়াজিব তরক হওয়ার কারণে দম দিয়ে ক্ষতিপূরণ করতে হবে। তাওয়াফে যিয়ারত আদায়ের পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের সাথে মেলামেশা হালাল হয় না।

    ৩. তাওয়াফে বিদা বা বিদায়ি তাওয়াফ:

    বায়তুল্লাহ হতে প্রত্যাবর্তনের সময় যে তাওয়াফ করা হয় তাকে তাওয়াফে বিদা বলে। এ তাওয়াফ কেবল বহিরাগতদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মক্কায় বসবাসকারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেহেতু মক্কায় বসবাসকারী হাজিদের জন্য প্রযোজ্য নয়, তাই এ তাওয়াফ হজের অংশ কি-না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেননা হজের অংশ হলে মক্কাবাসী এ থেকে অব্যাহতি পেত না। মুসলিম শরীফের একটি হাদীস থেকেও বুঝা যায় যে বিদায়ী তাওয়াফ হজের অংশ নয়। হাদীসটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলিইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «يُقِيمُ الْمُهَاجِرُ بِمَكَّةَ بَعْدَ قَضَاءِ نُسُكِهِ ثَلَاثًا»

    “মুহাজির ব্যক্তি হজের কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর মক্কায় তিন দিন অবস্থান করবে”[3]

    ‘হজের কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর’ এই বাক্য দ্বারা বুঝা যায় যে বিদায়ী তাওয়াফের পূর্বেই হজের সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে বহিরাগত হাজিদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হানাফী মাযহাবে ওয়াজিব। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলিইহি ওয়াসাল্লাম তাগিদ দিয়ে বলেছেন,

    «لَا يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ»

    “বায়তুল্লাহর সাথে শেষ সাক্ষাৎ না দিয়ে তোমাদের কেউ যেনো না যায়”[4]

    তবে এ তাওয়াফ যেহেতু হজের অংশ নয় তাই ঋতুস্রাবগ্রস্থ মহিলা বিদায়ী তাওয়াফ না করে মক্কা থেকে প্রস্থান করতে পারে।

    ৪. তাওয়াফে উমরা:

    উমরা আদায়ের ক্ষেত্রে এ তাওয়াফ ফরয ও রুকন। এ তাওয়াফে রামল ও ইযতিবা উভয়টাই রয়েছে।

    ৫. তাওয়াফে নযর:

    এটি মান্নতকারীর ওপর ওয়াজিব।

    ৬. তাওয়াফে তাহিয়্যা:

    এটি মসজিদুল হারামে প্রবেশকারীদের জন্য মুস্তাহাব। তবে যদি কেউ অন্য কোনো তাওয়াফ করে থাকে তাহলে সেটিই এ তাওয়াফের স্থলাভিষিক্ত হবে।

    ৭. নফল তাওয়াফ:

    যখন ইচ্ছা তখনই এ তাওয়াফ সম্পন্ন করা যায়।

    তাওয়াফ বিষয়ক কিছু জরুরী মাসায়েল

    তাওয়াফের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা:

    তাওয়াফের পূর্বে পবিত্রতা জরুরী। কেননা আপনি আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করতে যাচ্ছেন যা পৃথিবীর বুকে পবিত্রতম জায়গা। সহীহ হাদীস থেকে জানা যায়,

    «أَنَّ أَوَّلَ شَيْءٍ بَدَأَ بِهِ - حِينَ قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنَّهُ تَوَضَّأَ، ثُمَّ طَافَ»

    “বিদায় হজের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলিইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে অযু করেছেন, তারপর তাওয়াফ শুরু করেছেন”[5]

    আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলিইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে হজ করেছেন আমাদেরকেও তিনি সেভাবেই হজ করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন,

    «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، خُذُوا عَنِّي مَنَاسِكَكُمْ»

    “হে লোকসকল! আমার কাছ থেকে তোমাদের হজকর্মসমূহ জেনে নাও”[6]

    ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত এক হাদীসে তাওয়াফকে সালাতের তুল্য বলা হয়েছে। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, আল্লাহ তা’আলা এতে কথা বলা বৈধ করে দিয়েছেন, তবে যে কথা বলতে চায় সে যেনো উত্তম কথা বলে।

    «الطَّوَافُ صَلَاةٌ، وَلَكِنْ قَدْ أُذِنَ لَكُمْ فِي الْكَلَامِ، فَمَنْ نَطَقَ فَلَا يَنْطِقْ إِلَّا بِخَيْرٍ»

    “তাওয়াফ সালাততুল্য; তবে তাওয়াফে কথার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কাজেই যে কথা বলতে চায় সে যেনো কল্যাণকর কথাই বলে”[7]

    ইহরাম অবস্থায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ঋতুস্রাব শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলিইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু ‘আলিইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে তাওয়াফ করতে নিষেধ করে দেন।

    «إِنَّ هَذَا أَمْرٌ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ، فَاقْضِي مَا يَقْضِي الحَاجُّ، غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوفِي بِالْبَيْتِ»

    “নিশ্চয় এটি (ঋতুস্রাব) এমন এক বিষয় যা আল্লাহ তা‘আলা আদমের কন্যা সন্তানদের ওপর বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন। কাজেই তুমি কর যা হাজীগণ করে থাকে; তবে তুমি তাওয়াফ থেকে বিরত থেকো”[8]

    এ হাদীসও তাওয়াফের সময় পবিত্রতার গুরুত্বের প্রতিই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সে কারণেই ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবু ইউসুফ অযু অবস্থায় তাওয়াফ করাকে ওয়াজিব বলেছেন।[9]

    সতর আবৃত করা:

    তাওয়াফের সময় সতর ঢাকাও জরুরি। কেননা জাহেলি-যুগে উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করার প্রথাকে বন্ধ করার জন্য পবিত্র কুরআনে এসেছে,

    ﴿ يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ ﴾ [الاعراف: ٣١]

    “হে বনী আদম, প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সৌন্দর্য অবলম্বন করো”[সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]

    ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা ‘সৌন্দর্য’ অর্থ পোশাক বলেছেন। এক হাদীস অনুযায়ী তাওয়াফও একপ্রকার সালাত তা পূর্বেই উল্লেখ হয়েছে। তাছাড়া ৯ হিজরীতে, হজের সময় পবিত্র কা‘বা তাওয়াফের সময় যেনো কেউ উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ না করে সে মর্মে ফরমান জারি করা হয়।[10]

    নিয়ত করা:

    তাওয়াফের শুরুতে নিয়ত করা বাঞ্ছনীয়। তবে সুনির্ধারিতভাবে নিয়ত করতে হবে না; বরং মনে মনে এরূপ প্রতিজ্ঞা করলেই চলবে যে, আমি আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করতে যাচ্ছি। অনেক বই-পুস্তকে তাওয়াফের যে নিয়ত লেখা আছে (আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদু তাওয়াফা বায়তিকাল হারাম ফা য়াস্সিরহু লি ওয়া তাকাব্বালহু মিন্নি) হাদীসে এর কোনো ভিত্তি নেই।

    সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করা:

    সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করা উচিৎ। চার চক্করে তাওয়াফ শেষ করা কখনো উচিৎ নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলিইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনদের মধ্যে কেউ চার চক্করে তাওয়াফ শেষ করেছেন বলে হাদীস ও ইতিহাসে নেই।

    তাওয়াফ হজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে হাজরে আসওয়াদ বরাবর এসে শেষ করতে হবে। কেউ যদি হজরে আসওয়াদের বরাবর আসার একটু পূর্বেও তাওয়াফ ছেড়ে দেয় তাহলে তার তাওয়াফ শুদ্ধ বলে গণ্য হবে না।

    তাওয়াফ করার সময় রামল ও ইযতিবা:

    কোনো কোনো তাওয়াফে রামল ও ইযতিবা আছে তা নিয়ে ফেকাহবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। উমরার তাওয়াফ ও কুদূমের তাওয়াফেই কেবল ইযতিবা আছে, এটাই হলো বিশুদ্ধ অভিমত। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলিইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’ধরনের তাওয়াফে রমল ও ইযতিবা করেছেন।[11]

    হানাফি মাজহাব অনুসারে যে তাওয়াফের পর সাফা-মারওয়ার সাঈ আছে সে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল ও পুরা তাওয়াফে ইযতিবা আছে।

    নারীর তাওয়াফ:

    নারী অবশ্যই তাওয়াফ করবে। তবে পুরুষদের সাথে মিশ্রিত হয়ে নয়। যখন ভিড় কম থাকে তখন নারীদের তাওয়াফ করা বাঞ্ছনীয়। অথবা, একটু সময় বেশি লাগলেও দূর দিয়ে নারীরা তাওয়াফ করবে। পুরুষের ভিড়ে নারীরা হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে যাবে না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার তাওয়াফের ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,

    «كَانَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا تَطُوفُ حَجْرَةً مِنَ الرِّجَالِ، لاَ تُخَالِطُهُمْ، فَقَالَتْ امْرَأَةٌ: انْطَلِقِي نَسْتَلِمْ يَا أُمَّ المُؤْمِنِينَ، قَالَتْ: «انْطَلِقِي عَنْكِ» ، وَأَبَتْ»

    “আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পুরুষদের একপাশ হয়ে একাকী তাওয়াফ করতেন। পুরুষদের সাথে মিশতেন না। এক মহিলা বললেন, চলুন, হাজরে আসওয়াদ চুম্বন,স্পর্শ করি। তিনি বললেন, তুমি যাও, আমাকে ছাড়। তিনি যেতে অস্বীকার করলে”[12]

    ঋতুস্রাব অবস্থায় নারীরা তাওয়াফ করবে না। প্রয়োজন হলে হজের সময়ে ঋতুস্রাব ঠেকানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, ব্যবহার করার বৈধতা রয়েছে। তাওয়াফের সময় নারীর জন্য কোনো রামল বা ইযতিবা নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলিইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে রামল ইযতিবা করতে বলেন নি।

    হজের ফরয তাওয়াফের সময় যদি কারো ঋতুস্রাব চলে আসে এবং ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করা কোনো ক্রমেই সম্ভব না হয়, পরবর্তীতে এসে ফরয তাওয়াফ আদায় করারও কোনো সুযোগ না থাকে, এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞ ওলামাগণ ফাতওয়া দিয়েছেন যে, ন্যাপকিন দিয়ে ভালো করে বেঁধে তাওয়াফ আদায় করে নিতে পারে।

    সাফা মারওয়ার মাঝে সাঈ:

    সাত চক্কর কীভাবে হিসাব করবেন?

    সাফা মারওয়ার মাঝে যাওয়া-আসা করাকে সাঈ‘ বলে। সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত এক চক্কর হয়, আবার মারওয়া থেকে সাফায় ফিরে এলে আরেক চক্কর। অনেকেই ভুল করে, সাফা থেকে মারওয়া আবার মারওয়া থেকে সাফায় পর্যন্ত, এক চক্কর হিসাব করে থাকে। অর্থাৎ সাফা মারওয়ার মাঝে ১৪ বার যাতায়াত করে ৭ চক্কর হিসাব করে থাকে, এটা মারাত্মক ভুল।

    সাঈ‘ করার গুরুত্ব ও হুকুম

    ফরয তাওয়াফ- যেমন, তাওয়াফে উমরা ও তাওয়াফে ইফাযা- এর পর সাফা মারওয়ার মাঝে সাঈ‘ করাও আবশ্যিক। জমহুর ফুকাহা সাফা মারওয়ার মাঝে সাঈকে রুকন হিসেবে গণ্য করেছেন।[13]

    হাদীসে এসেছে, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,

    «فَلَعَمْرِي، مَا أَتَمَّ اللهُ حَجَّ مَنْ لَمْ يَطُفْ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ »

    “আমার জীবনকে সাক্ষী রেখে বলছি, ওই ব্যক্তির হজ আল্লাহর কাছে পূর্ণতা পাবে না যে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ‘ করল না।[14]

    অপর এক হাদীসে এসেছে,

    «اسْعَوْا، فَإِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ السَّعْيَ»

    “সাঈ‘ করো, কেননা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর সাঈ‘ লিখে দিয়েছেন”[15]

    সমাপ্ত

    [1] সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯৫৬

    [2] সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ১৩৬০

    [3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৫২

    [4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩২৭

    [5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৪১

    [6] সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৩০৬২

    [7] মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস নং ৯৮৯১

    [8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১১

    [9] ইমাম মুহাম্মদ আশ-শানকীতি, খালিসূল জুমান, পৃ: ১৮২

    [10]. তাফসীর ইবন কাছীর, খন্ড: ১, পৃ: ১৫৭

    [11] আল্লামা ইবন হাজার আল-আসকালানী, ফাতহুল বারী, খণ্ড: ৩, পৃ: ২৬৯

    [12] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬১৮

    [13] ইবন হাজার আল-আসকালানী, ফাতহুল বারী, খণ্ড: ৩, পৃ: ২৬৯

    [14] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৭৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৭৭

    [15] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৭৩৬৭

    معلومات المادة باللغة العربية